টক্কর: পাঞ্জা লড়ছেন মোহনবাগান সমর্থক অভিজিৎ দে বিশ্বাস ও ইস্টবেঙ্গল সমর্থক মনোজ দাস। শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
এক দলের ব্রিটিশের বিরুদ্ধে জয়ের উদ্যাপন। অন্য দলটি আর দু’দিনের মধ্যে শতবর্ষে পা দিতে চলেছে। সোমবার তাই শিলিগুড়ি ছেয়ে রইল সবুজ-মেরুণ আর লাল-হলুদে। ‘চির প্রতিদ্বন্দ্বী’ দুই ক্লাবের মধ্যে ‘শত্রুতা’রও একশো বছর হতে চলেছে। তাই উৎসবের ফাঁকে পাঞ্জা কষা চলছেই। আবার দু’দলের সমর্থকই মেনে নিচ্ছেন, তাঁরা একে অন্যের পরিপূরক। এক দল না থাকলে অন্য দলের গুরুত্ব নেই।
১৯১১ সালের এই দিনেই ব্রিটিশ দল ইস্ট ইয়র্কশায়ারকে হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জিতেছিল মোহনবাগান। দিনটিকে তারা ‘মোহনবাগান দিবস’ নামে পালন করে। এ বছর দিনটি পালনের জন্য মাসখানেক আগে কলকাতায় এক হাজার বিশেষ সন্দেশের বরাত দিয়েছিল শিলিগুড়ি মেরিনার্স। সকাল থেকেই তাদের সদস্যরা কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে গোষ্ঠপাল মূর্তির সামনে হাজির ছিলেন। বিলি হল সেই সন্দেহ। ওড়ানো হল সবুজ-মেরুণ বেলুন। সদস্যদের মধ্যে বিলি করা হল মেরিনার্সের বিশেষ জার্সি। শিলিগুড়ি জংশন এবং টাউন স্টেশনে গিয়ে গরিবদের হাতে খাবারের প্যাকেটও তুলে দেওয়া হয়। রাতে কেক কাটা এবং নৈশভোজের অনুষ্ঠানও হয় দেশবন্ধু পাড়ায়, মোহন ফ্যানস ক্লাবের এক কর্মকর্তার বাড়িতে।
শিলিগুড়ি মেরিনার্সের তরফে সৌরভ দাস বলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষে অভিনন্দন। তবে মনে রাখতে হবে, মোহনবাগানই পুরনো দল। আমাদের কিছু পুরনো সদস্যের হাত ধরেই ওদের পথ চলা শুরু।’’ তাঁর দাবি, মোহনবাগানের শতবর্ষ সকলের কাছে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। ১৯১১ সালের শিল্ড জয়ের বিভিন্ন মূহূর্ত তুলে ধরে এ দিন ট্যাবলো ঘুরছে শহরে। গান বেজেছে ‘আমাদের সবুজ মেরুণ...।’
১ অগস্ট শতবর্ষে পা দিচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতে ওই দিন ক্লাব পতাকা তোলার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। শিলিগুড়ি শহরে তৈরি হচ্ছে শতবর্ষ তোরণ। পতাকা-ফেস্টুন দিয়ে হিলকার্ট রোড মুড়ে ফেলা হচ্ছে ১ অগস্টের আগেই। উৎসব অবশ্য চলবে, জানালেন ইস্টবেঙ্গলের কর্তারা। ক্লাবের উত্তরবঙ্গের লিয়াজ় ম্যানেজার সৌমিক মজুমদার যেমন বলেন, পুজোর ঠিক আগে, ১ অক্টোবরে শোভাযাত্রা হবে জলপাইগুড়ি শহরে। শোভাযাত্রা হবে শিলিগুড়িতেও। আলোকসজ্জারও প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনকি, ইলিশ উৎসবের আয়োজনের কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানান ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সদস্য রবীন মজুমদার।
‘ইস্টবেঙ্গল দ্য হার্ট অব শিলিগুড়ি’র সম্পাদক স্বস্তিক সাহা বলেন, ‘‘আমাদের আয়োজন চলছে। আমরা কী করব, সেটা দেখার জন্য ওরা ক’টা দিন অপেক্ষা করুন।’’ প্রথম পর্যায়ে ১-১৩ অগস্ট শিলিগুড়িতে বিভিন্ন কর্মসূচি থাকছে। ১৩ অগস্ট স্পোর্টস ডে পালন হবে। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা তথা লাল-হলুদ ভক্ত কৌস্তভ বসু জানান, ‘‘বাবা, ঠাকুরদাও ইস্টবেঙ্গল ফ্যান। এর উন্মাদনা আলাদা। এখনও কলকাতায় গেলে ইস্টবেঙ্গল টেন্টে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আসি।’’
তবে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী যে একে অন্যের পরিপূরক, সেটা মেনে নিলেন কৌস্তভ। বলেন, ‘‘বাঙালি যত দিন থাকবে, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের যুদ্ধ থাকবে। এটা আছে বলেই খেলায় এখনও প্রাণ রয়েছে।’’