দুঃসাহস: বাচ্চাটিকে নিয়ে বেরিয়েছেন এই দম্পতি। কারও মুখে মাস্ক নেই। বুধবার কোচবিহারের বড়দেবীর একেবারে সামনেই। সেখানেও কোনও ঘেরাটোপের ব্যবস্থা তখনও পর্যন্ত ছিল না। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই ইতিউতি ভিড় জমতে শুরু করে। দেবীবাড়িতে মাস্ক ছাড়াই শিশুপুত্রকে নিয়ে হাজির এক দম্পতি। মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়েই নিজস্বী তুললেন। কেন কেউ মাস্ক পড়েননি? বললেন, ‘‘এটা ভুল হয়ে গিয়েছে।” পকেট থেকে একটি মাস্কও বের করলেন। তারপর চার চাকার একটি গাড়িতে উঠে তাঁরা ছুটলেন আরেক মণ্ডপের দিকে।
তখন দুপুর ১২টা পেরিয়েছে। সাগরদিঘি ঘাটে একটু ছায়ায় বসে এক প্রবীণ। নাম জিজ্ঞেস করতেই বললেন, নরেশ দাস। আশেপাশে আরও কয়েকজন। প্রত্যেকেরই মাস্ক গলায় ঝুলছে। তাঁদের একজনের কাশিও হচ্ছে। থু-থু ফেলছেন রাস্তার উপরেই। জানালেন, সকাল সকাল ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন তাঁরাও। মাস্ক কেন ঠিক করে পরছেন না জিজ্ঞেস করতেই বলেন, “কখনও কখনও মনে থাকে না।”
বুধবার পঞ্চমীর দিনে কোচবিহার শহর জুড়ে এমনই খণ্ডচিত্রের ছড়াছড়ি। বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করলেন না অনেকেই। অনেকেই আবার বিধিনিষিধের কথা ঠিকমতো জানেনও না। পুজো মণ্ডপগুলিতে অবশ্য সকাল থেকেই শেষ মুহূর্তের কাজ চলছিল। একটি-দু’টি মণ্ডপের গেট বন্ধ রাখা হয়েছিল। ভিতরে ঢোকার অনুমতি মিলছিল শুধুমাত্র পুজো কমিটির সদস্যদের। বাকি মণ্ডপ অবশ্য উন্মুক্ত। সামনে দিয়েই রাস্তা তৈরি রাখা হয়েছে। অবাধ যাতায়াত চলছে।
বিকেলের পর থেকে এক-দু’জন করে মণ্ডপের সামনে ঘোরাফেরা শুরু করেন। নিউটাউন ইউনিট, পুরনো পোস্ট অফিস পাড়া, ভারত ক্লাব থেকে শুরু করে গুড়িয়াহাটি ক্লাব— সব মণ্ডপের সামনেই ঘুরতে দেখা যায় বেশ কিছু দর্শনার্থীকে। অবশ্য মণ্ডপের ভেতরে কেউই ঢুকছিলেন না। রাস্তার পাশ থেকেই মণ্ডপ-প্রতিমা দেখে আরেক রাস্তা ধরে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
ভবানীগঞ্জ বাজার থেকে সামানু দূরে পুরনো পোস্ট অফিস পাড়ার মাঠ। আশেপাশে ভিড় জমিয়েছিলেন অনেকেই। কেউ কেউ অবশ্য বাজারের পথে চলে যাচ্ছিলেন। তাঁদের অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না। একসঙ্গে জটলা করেও হাঁটতে দেখা গিয়েছে অনেককে। ওই রাস্তা ধরেই বাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন বেশ কয়ে গৃহবধূ। তাঁদের সঙ্গে শিশুও ছিল। তাঁদের অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না। জিজ্ঞেস করলে তাঁদেরই একজন রীতা দত্ত বলেন, “আমাদের কিছু হবে না।”
পুজোর দিনে লোকজনের এই বেপরোয়া মনোভাব নিয়েই চিন্তিত পুলিশ-প্রশাসন। কোচবিহার সদর মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল বলেন, “আমরা প্রতিদিন নানা ভাবে সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। মাস্ক ব্যবহার না করলে কী হতে পারে, তা জানানো হচ্ছে। এর পর সবাই সচেতন হবেন এই আশা রাখছি।”