দিদির দুতেদের গাড়ি। — ফাইল চিত্র।
‘দিদির দূত’ হয়ে গ্রামে গেলেও, রাত্রিযাপন না করেই বাড়ি ফেরার অভিযোগ উঠছে তৃণমূল নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে। এই একই অভিযোগ উঠেছিল বিধানসভা নির্বাচনের আগে, তৃণমূলের ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি ঘিরে। সে সময়ে রাজ্যের শাসক দলের এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, রাতের খাবার খেয়ে বাড়ির পোশাক পরে বিছানায় শুয়ে ছবি তুলে তিনি নিজের বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন। গ্রামে রাতে থাকেননি।
এ বার আবার ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে দিদির দূত হয়ে গ্রামে যেতে শুরু করেছেন তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা। দল যে ভাবে ওই কর্মসূচি সাজিয়েছে, তাতে দিনভর প্রচারের পরে, রাতে এক কর্মীর বাড়িতে থাকতে হবে নেতাকে। সকালে পার্টি অফিসে দলীয় পতাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফিরবেন তিনি। কিন্তু এ বারেও উঠছে ‘কথা না শোনার’ সে পুরনো অভিযোগ।
এই তালিকায় নাম রয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী উদয়ন গুহেরও। উদয়ন অবশ্য তা অস্বীকার করেননি। তাঁর বক্তব্য, তিনি থাকলে, তাঁর সঙ্গে আরও অন্তত দশ জন (নিরাপত্তা রক্ষী মিলিয়ে) থাকবেন। শীতের রাতে এক সঙ্গে দশ-বারো জন থাকার পরিকাঠামো গ্রামের যে কোনও বাড়িতে পাওয়া কঠিন। তাই তিনি থাকতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘কিছু সমস্যার জন্য রাতে থাকা যায়নি।’’
শুধু উদয়ন নয়, কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি উমাকান্ত বর্মণ, দলের কোচবিহার জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ রয়েছে দলের অন্দরে। উমাকান্ত গুড়িয়াহাটিতে ‘দিদির দূত’ কর্মসূচির করার পরে, জেলা পরিষদের অতিথি নিবাসে ছিলেন বলে অভিযোগ। যদিও উমাকান্ত বলেন, ‘‘এটা ঠিক নয়। আমি রাত্রিযাপন করেছি।’’ আর গিরীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘বয়স, শারীরিক অসুস্থতা ও আরও কিছু কারণে এক-দু’জন রাত্রিযাপন না করতে পারেন। তবে আমি করেছি।’’
কোচবিহার জেলায় গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ‘দিদির দূত’ কর্মসূচি চালু হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সব থেকে বেশি কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন দলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক এবং চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ। এর পরেই রয়েছেন সভাধিপতি উমাকান্ত। এ ছাড়া, ওই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন দুই বিধায়ক পরেশ অধিকারী ও জগদীশ বসুনিয়া, তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের সভানেত্রী সুচিস্মিতা দেবশর্মা, প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় এবং মুকুল বৈরাগ্য। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী দু’টি কর্মসূচি পালন করেছেন। তার মধ্যে একটি কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের চিলকিরহাট এবং অপরটি শীতলখুচি বিধানসভা কেন্দ্রের বড়কৈমারিতে। তার মধ্যে একাধিক ক্ষেত্রে দলের নেতারা গ্রামে রাত্রিযাপন করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, ‘‘কিছু সমস্যার কারণে একটি-দু’টি ক্ষেত্রে এমন হয়েছে। অবশ্য তাতে কর্মসূচির কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ, দিনভর ঘুরে পুরো কর্মসূচি সবাই পালন করেছে।’’ বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসুর কটাক্ষ, ‘‘গ্রামের মানুষকে ভুল বোঝানোর জন্যই ওই কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্যের শাসক দল।’’