ধূপগুড়ি পুর এলাকার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধু পাড়া এলাকায় ছাদনাতলায় বিয়ে হল আয়ুষ আর বিউটির। — নিজস্ব চিত্র।
মাঘের হিমেল সন্ধ্যায় বসল পুতুলের বিয়ের আসর। লাজে রাঙা ‘কনে বউ’ বিউটি-র মালাবদল হল আয়ূষের সঙ্গে। তাদের ঘটকালির কাজটা করেছিলেন দুই পরিবারের আত্মীয়রা। রবিবার রাতে ধূপগুড়ি পুর এলাকার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধু পাড়া এলাকায় ছাদনাতলায় বিয়ে হল আয়ুষ আর বিউটির। ছক ভাঙা এই বিয়ের আসরে এলাকার কচিকাঁচা-সহ প্রায় ৩০০ জন অতিথি নিমন্ত্রিত ছিলেন।
কনেকে সম্প্রদান করলেন মেয়ের মা, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী চন্দ্রিমা সরকার। পাত্রকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন ছেলের মা, চতুর্থ শ্রেণির প্রিয়ঙ্কা মণ্ডল। মেনুতেও ছিল একেবারে খাস বিয়ের ছাপ। ফ্রায়েড রাইস, চিকেনে শুরু হলেও শেষ অবধি অতিথিদের সংখ্যার চাপে খিচুড়ি আর সবজিতে আপ্যায়িত করা হয়।
শুরুটা অবশ্য ক’দিন আগেই। প্রথমে হুজুগ, তার পর দুই বাড়ির সম্মতিতে পুতুলের বিয়ের এই আসর। রবিবার সকাল থেকেই ছিল সাজো সাজো রব। রীতি মেনে কাকভোরে হয়েছে অধিবাস, তারপর হলুদ কোটা, জল সইতে যাওয়া, বর-কনের গায়ে হলুদস্নানের পরে রাতে সানাইয়ের সুরে বিয়ের আসর।
প্রথমে হুজুগ, তার পর দুই বাড়ির সম্মতিতে পুতুলের বিয়ের এই আসর। নিজস্ব চিত্র।
অতিথিদের কাছে তো বটেই, যিনি মন্ত্রোচ্চারণে চারহাত এক করলেন সেই পুরুতমশাই সুশান্ত ভট্টাচার্যও বললেন, ‘‘এই অভিজ্ঞতা একদম নতুন। পঁয়ত্রিশ বছর যজমানি করছি। তবে এই প্রথম পুতুলের বিয়ে দিলাম। একেবারে মানুষের বিয়ের মতোই মন্ত্র পড়ে বিয়ে দিয়েছি। রীতিনীতিতেও কোন ফারাক ছিল না।’’
আরও পড়ুন: ৩ হাজার দিয়েও ৩ বছরে মেলেনি ঘর
পুতুলের বিয়ে বললেই মন পড়ে ১৯৬৯ সালের ছবি ‘পরিণীতা’ ছবির সেই বিশেষ দৃশ্য এবং অবশ্যই আরতি মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে নস্টালজিক গান। তবে ধূপগুড়ির বিয়েতে সেই গানের মতো খাট, পালঙ্ক, সাতভরি সোনা দিতে হয়নি। বরং, মেয়ের মা বলল, ‘‘বেয়ানের কিছু চাহিদা ছিল না বিয়েতে। তবে বিয়ের তত্ত্বে বেয়ানের পছন্দের চকোলেট, আলু চিপসের প্যাকেট আর সংসারের জিনিস দিয়েছি।’’ সম্ভবত খোঁটা দেওয়ার জন্য ‘রায়বাঘিনী ননদিনী’ কোনও পুতুলও নেই নবপরিণীতার সংসারে। বরপুতুল আয়ুষের মায়ের তার সুন্দরী পুত্রবধূকে খুব পছন্দ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চন্দ্রিমা ও প্রিয়ঙ্কা খুবই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। নিয়মিত একসঙ্গে খেলাধুলো করে। একদিন ইউটিউবে পুতুলের বিয়ে দেখার পর থেকেই শুরু হয় বায়না। ওদের ইচ্ছেপূরণে শামিল হন পরিবারের বড়রাও। বিয়ে, ভোজের পাশাপাশি ছিল নাচগানের জমজমাট আসরও।
আরও পড়ুন: ৩ বছরের তানিশার ফুসফুসে বিরল অসুখ, দর্জি বাবা অসহায়
স্থানীয় বাসিন্দা জীবন সরকার বলেন, ‘‘আজকের শৈশব হয় কার্টুন, নয় তো মোবাইল গেমে মজে আছে৷ সেখানে পুতুল খেলার মতো সাবেক অনাবিল আনন্দটুকু শিশুদের ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য। ফলে সবাই মিলেই অংশ নিয়েছি শিশুদের এই অনুষ্ঠানে। পুতুলের বিয়েটা বলা যায় প্রতীকী। আসল উদ্দেশ্য, ছোটদের শৈশবের হারিয়ে যাওয়া স্বাদ ফিরিয়ে দেওয়া।’’