দুই শিলাকে মাতৃরূপে পুজো করেন ধিমালরা। — নিজস্ব চিত্র।
প্রকৃতিই দেবী। তাই ২৫০ বছর ধরে শিলারূপে দুর্গাকে পুজো করে চলেছে নকশালবাড়ির ‘ধিমাল’ জনজাতি। দু’টি শিলা পাশাপাশি রাখা রয়েছে শতাধিক বছর ধরে। সেই শিলা দান্তাওরাং, দান্তাবেরাংকেই ষষ্ঠী থেকে দশমী মা রূপে পুজো করে আসছে ধিমালরা।
ভারতের প্রাচীন জনজাতিদের মধ্যে ধিমাল অন্যতম। ধিমালেরা প্রকৃতির উপাসক। কোনও মন্দিরে মূর্তি বসিয়ে পুজো করে না। প্রকৃতিকেই মাতৃরূপে পুজা করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। নিজেদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র যেমন, চোঙ্গা মিরদং, পাশিংকোদোতারা, পাশিংকোধোল, তুনজাই, গুমরা, মুচুঙ্গা, তুমনা বাজিয়ে চার দিন ধরে চলে পুজো। প্রথাগত পোশাক পরে গান, নাচ করেন মেয়েরা। সারা বছরের ঘটনা, দৈনন্দিন জীবনের দুঃখ-কষ্ট, প্রেম উঠে আসে তাঁদের গানে। ধিমালরা সেই গানই দেবীকে উৎসর্গ করেন, যাতে সারা বছর দেবী সেই অনুভূতিগুলির খেয়াল রাখেন।
ধিমাল জনজাতির প্রধান গর্জেনকুমার মল্লিক জানান, গত ২০ বছর ধরে গ্রামের অন্যান্য জনজাতির অনুরোধে একই মন্দিরে চলছে দুর্গাপুজো। বেশিরভাগই রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। তাদের অনুরোধে দান্তাওরাং, দান্তাবেরাংয়ের পাশে মায়ের মূর্তিও স্থাপন করা হয়। গর্জেন বলেন, ‘‘প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ বছরের পুরনো জনজাতি আমরা৷ অসম থেকে গভীর জঙ্গল হয়ে আজ এই নকশালবাড়ির ইন্দো-নেপাল সীমান্তে এসেছি। আমাদের জনজাতির বহু মানুষ নেপালে রয়েছেন। আমাদের দুর্গাপুজো মানেই প্রকৃতির পুজো৷ একই নিয়মে পুজো হয় কিন্তু আড়ম্বরহীন ভাবে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের শিলার পাশাপাশি মূর্তি পুজোও হয়৷’’
গ্রামবাসী প্রতিমা সিংহ মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের শিলায় পুজো হয়। এটাই আমাদের পরম্পরা। নিজেদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আমরা গান বাজনার মাধ্যমে দশমী পর্যন্ত কাটিয়ে দেব। আমাদের পুজোয় কোনও ব্রাহ্মণ লাগে না। প্রকৃতি মায়ের পুজো আমরা নিজেরাই করি।’’ গ্রামবাসী মনিষা মল্লিক জানান, নিষ্ঠার সঙ্গে পুোজ করা হয়৷