সিকিমের রাস্তা। — ফাইল চিত্র।
দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ‘হেনস্থা’ রুখতে সিকিম-পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ চুক্তি নতুন করে পর্যালোচনার দাবি উঠল। রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর নির্দেশে গত মঙ্গলবার দার্জিলিঙের জেলাশাসকের দফতরে পরিবহণ দফতর, বিভিন্ন পর্যটন ও পরিবহণ সংগঠনের বৈঠক হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ২৩ মে মুখ্যসচিব রাজ্যের বিভিন্ন জেলাশাসক এবং বিভিন্ন দফতরের প্রধান সচিবদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বৈঠক করেন। বিভিন্ন বিষযের সঙ্গে একেবারে আলাদা করে সিকিমে বিভিন্ন পারমিট নিয়ে গাড়়ি চলাচলের সমস্যার কথা জানিয়ে মুখ্যসচিব দার্জিলিঙের জেলাশাসককে দেখতে নির্দেশ দেন। সে প্রেক্ষিতেই দু’মাস পরে এই বৈঠক।
চুক্তি পর্যালোচনা ছাড়াও, বিভিন্ন প্রস্তাব সামনে এসেছে। জেলাশাসক তা রাজ্যের পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহনকে পাঠাবেন। তা নিয়ে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে আলোচনার পরে, আধিকারিকেরা পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন। নতুন ভাবে সরকারি স্তরে সিকিমের সঙ্গে আলোচনাও হতে পারে। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিকিমে বরাবর গাড়ির সমস্যা এবং অভিযোগ রয়েছে। বৈঠকের প্রস্তাব এবং সিদ্ধান্তগুলি খতিয়ে দেখার পরেই আগামী পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, বাংলা ও সিকিমের মধ্যে বহুদিন ধরেই পরিবহণ চুক্তি রয়েছে। তাতে সিকিমের গাড়ি বাংলার যে কোনও প্রান্তে অবাধে যাত্রী নিয়ে ঘুরতে পারে। আর সিকিমে নাথু লা, ছাঙ্গু বা সিল্ক রুটের মতো নিয়ন্ত্রিত এলাকা ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের গাড়ি সর্বত্র যেতে পারবে বলে চুক্তিতে রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে রংপোর পর থেকেই পরিস্থিতি বদল হতে থাকে বলে অভিযোগ। পর্যটন এবং পরিবহণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এ রাজ্যের গাড়ি শুধু নয়, ‘অল ইন্ডিয়া পারমিট’ থাকলেও স্থানীয় রাজ্যের ‘কাউন্টার সিগনেচার’ দাবি করে গাড়ি আটকানো হয়। বিভিন্ন এলাকায় গেলেই ট্র্যাফিক পুলিশ গাড়ি আটকায়। আর গাড়ি ধরলে, চুক্তির কথা বললে তা মানা হয় না। পার্কিং এবং ট্র্যাফিক আইন ভাঙার অভিযোগ তুলে পশ্চিমবঙ্গের গাড়িকে জরিমানা করা হয়।
বৈঠকে পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’, ‘হিমালয়ান ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটি’, ‘দার্জিলিং লাক্সারি ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’, এতোয়োর মতো সংগঠনের প্রতিনিধিরা ছিলেন। সেখানেই চুক্তি নতুন করে পর্যালোচনা করা, বিনা বাধায় ‘অল ইন্ডিয়া পারমিট’ নিয়ে সিকিম ঘোরা, দুই রাজ্যের চুক্তিতে থাকা তিন হাজার করে পারমিট দেওয়া গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো, গ্যাংটকে দিনে এবং রাতে এ রাজ্যের বাস, গাড়ির জন্য আলাদা জমি চিহ্নিত করে ‘পার্কিং লট’ তৈরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সিকিম পরিবহণ সংস্থাকে শিলিগুড়িতে এত বড় বাস টার্মিনাস করার জন্য রাজ্য সরকার জমি দিয়েছে। তা হলে গ্যাংটকে পশ্চিমবঙ্গ কেন তেমন কিছু পাবে না! ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর সচিব সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘চুক্তি পর্যালোচনা জরুরি।’’