প্রতীকী ছবি
করোনা সংক্রমণ মেলার পর গত বৃহস্পতিবার দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দা ৬০ বছরের এক ব্যাক্তিকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ রেফার করা হয় কাওয়াখালির কোভিড হাসপাতালে। পরদিন ভোরে তিনি মারা যান। গত শুক্রবার রাতে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে কাওয়াখালির কোভিডে রেফার করা হয় শালুগাড়ার বাসিন্দা এক যুবককে। সেখানে শনিবার ভোরে তিনি মারা যান। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ৭ জুলাই রাতে ভর্তি করানো হয়েছিল শিলিগুড়ির সন্তোষীনগরের এক ব্যক্তিকে। তার ঘণ্টাখানেক পরেই তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর লালারস পরীক্ষা করে ‘রিপোর্ট পজ়়িটিভ’ মেলে। এই কয়েকটি ক্ষেত্রেই শুধু নয়, করোনা আক্রান্ত যারা শিলিগুড়িতে মারা গিয়েছেন, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া নিয়ে অভিযোগ তুলেছে পরিবার। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, ঠিক সময়ে চিকিৎসা না মেলার জন্যই কি শিলিগুড়িতে করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে?
অভিযোগ উঠছে অধিকাংশ নার্সিংহোমের ক্ষেত্রেই করোনা রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা মিলছে না। দু’টি কোভিড হাসপাতাল, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকেও অনেকে দায়ী করেছেন। জুনের আগে পর্যন্ত শিলিগুড়ি শহরে করোনা সংক্রমণ নিয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে একজন কালিম্পঙের বাসিন্দা, তাঁর শিলিগুড়ির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি ছিল। আর এক জন, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক রেলকর্মী। এখন শিলিগুড়ি পুর এলাকাতেই মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ জন। অভিযোগ, লালারসের রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়া, এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে রেফার- এমনই কারণে সময় মতো চিকিৎসা মিলছে না। কোভিড হাসপাতালেও ঠিক মতো পরিষেবা নেই বলে অভিযোগ।
কাওয়াখালির কোভিড হাসপাতালের একটি সূত্রে দাবি, এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল থেকে শেষ অবস্থায় রোগীকে পাঠানো হচ্ছে। অথচ সেই রোগীদের চিকিৎসা করানোর মতো ব্যবস্থা নেই। মেডিক্যাল কলেজ থেকে যখন মুমুর্ষু রোগীকে কোভিডে পাঠানো হচ্ছে তখন ‘মে়ডিক্যাল টিম’ এসে তাঁকে দেখা দরকার। অথচ এতদিন কোনও মেডিক্যাল টিম ছিল না। ৮ জুলাই ৮ সদস্যের মেডিক্যাল টিমের নির্দেশিকা দেওয়া হলেও তারা এখনও সেভাবে কাজ শুরু করেনি বলে অভিযোগ। জুনের শেষ পর্যন্ত কাওয়াখালির কোভিড হাসপাতালে আইসিইউ-তে কোনও ইনচার্জ-ই ছিল না। দিন কয়েক আগে দুই চিকিৎসককে পাঠানো হয়েছে। তাতেও হাল কতটা ফিরেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
উত্তরবঙ্গে করোনা মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘কোমর্বিডিটি যুক্ত রোগীদের বাঁচাতে, জটিল পরিস্থিতির রোগীদের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল টিম গঠন হয়েছে। প্রয়োজন মতো তাঁরা দেখছেন।’’ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সুপার কৌশিক সমাজদার জানান, তাঁদের হাসপাতালেই অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের শেষ অবস্থায় আনা হচ্ছে। তবে তাঁরা গুরুত্ব দিয়েই রোগী দেখছেন। করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়লে রোগীর পরিস্থিতি দেখে কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
১০ নম্বর ওয়ার্ডে চার্চ রোডের একটি পরিবারের অভিযোগ, ১৬ জুন শ্বাসকষ্ট, কিডনির সমস্যা নিয়ে রোগীকে নানা নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলেও কেউ ভর্তি নেয়নি। শেষে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যখন নেওয়া হয় তাঁর কিছুক্ষণ পরেই ওই ব্যক্তি মারা যান। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য রোগীর পরিবারের তরফেও দেরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।