মৃত: বুধবার অসুস্থ গন্ডারটিকে উদ্ধার করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে একের পর এক গন্ডারের মৃত্যু ও অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন বন দফতর উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জঙ্গলে কড়া সতর্কতা জারি করল। বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে জলদাপাড়ায়। এই জাতীয় উদ্যানের শিসামারা ও মালঙ্গি বিটকে জঙ্গলের বাকি অংশের সঙ্গে অপাতত বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বনকর্তারা। এই দুই বিটে থাকা বন্যপ্রাণীরা যাতে জঙ্গলের বাকি অংশে কিংবা জঙ্গলের বাকি অংশে থাকা বন্যপ্রাণীরা যাতে এই দুই বিটে আসতে না পারে সেদিকে নজর রাখছেন বনকর্মীরা। পরপর গন্ডারের মৃত্যুর কারণ জানতে সেগুলির শরীরের বিভিন্ন নমুনা কলকাতার বেলগাছিয়া ও উত্তরপ্রদেশের বরেলীর পরীক্ষাগারে পাঠাচ্ছেন বনকর্তারা।
দফতর সূত্রের খবর, জলদাপাড়া জঙ্গলে গন্ডারের এই মৃত্যু মিছিল শুরু হয় গত রবিবার। ওইদিন শিসামারা বিটে একটি পুরুষ গন্ডারের দেহ উদ্ধার হয়। তবে বন দফতরের তরফে জানান হয়, সঙ্গিনী দখলের লড়াইয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে গন্ডারটি জখম হয়েছিল। তার জেরেই সেটির মৃত্যু হয়। কিন্তু তারপর মঙ্গলবার ও বুধবার সেই শিসামারা বিটেই পরপর তিনটি গন্ডারের মৃত্যু নিয়েই শুরু হয়েছে ধোঁয়াশা ও উদ্বেগ। দফতর সূত্রের খবর, মঙ্গলবার শিসামারা বিটে একটি গন্ডারের দেহ পাওয়া গিয়েছিল। বুধবার ওই বিটের শিধাবাড়ি গ্রামে একটি অসুস্থ স্ত্রী গন্ডারকে উদ্ধার করে বন দফতর। পাশেই তার শাবককে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু শাবকটি সুস্থ থাকলেও পরে মারা যায় মা গন্ডারটি। বুধবার এই ঘটনার মাঝেই শিধাবাড়ি গ্রাম থেকে খানিকটা দূরে সেই শিসামারি বিটেই আরও একটি গন্ডারের দেহ উদ্ধার করেন বনকর্মীরা।
মঙ্গলবার ও বুধবার তিনটি গন্ডার কেন মারা গেল, তা নিয়ে হইচইয়ের মাঝেই বৃহস্পতিবার জলদাপাড়ারই মালঙ্গির জঙ্গলে আরও একটি গন্ডারকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ফলে উদ্বেগ বেড়েছে বন দফতরের অন্দরে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের শীর্ষ বনকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মাদারিহাটে এসে উত্তরবঙ্গের শীর্ষ বনকর্তারা ফের জলদাপাড়ার বনাধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর মধ্যেই কোনও কোনও মহল থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, অ্যানথ্রাক্স বা কোনও ভাইরাসের কারণে গন্ডারগুলির মৃত্যু হতে পারে।
বন দফতর সূত্রের খবর, ১৯৯৩ সালেও জলদাপাড়ায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে একটি গন্ডারের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘তর্কের খাতিরে যদি অ্যানথ্রাক্স তত্ত্বটিকে সঠিক বলে ধরেও নেওয়া যায়, তবে বুধবার শিধাবাড়ি গ্রাম থেকে উদ্ধার হওয়া গন্ডার শাবকটি কী করে এখনও সুস্থ রয়েছে? কারণ সেটি তো সারাক্ষণই অসুস্থ মা গন্ডারের পাশেই ছিল! অথচ, এখনও পর্যন্ত সেটি সুস্থ।’’
বনমন্ত্রী রাজীব বলেন, ‘‘মৃত গন্ডারদের দেহের নমুনা পরীক্ষায় কী বলা হয়, আমরা তার অপেক্ষায় রয়েছি। সেই রিপোর্ট আসার পরই গন্ডারের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘বেলগাছিয়া ও বরেলীতে মৃত গন্ডারের দেহের নমুনা পরীক্ষা হবে। সেইসঙ্গে ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউটেও সেই নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হবে।’’
কারণ যা-ই হোক, জলাদাপাড়ায় একের পর এক গন্ডারের মৃত্যুতে সতর্ক বন দফতর। যার জেরে এ দিনই উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জঙ্গলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ সতর্কতা জারি হয়েছে জলদাপাড়ায়।
এখানকার ডিএফও কুমার বিমল বলেন, ‘‘আমরা সতর্ক। দেহের নমুনা পরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞরা যেমন পরামর্শ দেবেন, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’