চোখের জলে: স্মরজিতের বৃদ্ধা মা মীরাদেবী। নিজস্ব চিত্র
কিছু দিন আগে এই হাসপাতালেই বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। হাসপাতাল চত্বর থেকে মিলেছিল মদের বোতল। মঙ্গলবার ভোর রাতে সেই শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালেই পুরুষ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের শৌচাগার থেকে থেকে এক রোগীর ঝুলন্ত দেহ মিলল। মৃত স্মরজিৎ চক্রবর্তী (৫২) ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির ভালবাসা মোড় এলাকার বাসিন্দা। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ১৮ ডিসেম্বর পেটের রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। তাঁর মা মীরা চক্রবর্তীর দাবি, এ দিনই তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা ছিল। এই দিন ভোরে শৌচাগারে এক রোগীর আত্মীয় শৌচকর্মে গিয়ে দেখেন, স্মরজিতের দেহ ঝুলছে।
স্মরজিতের বৃদ্ধা মা মীরাদেবী এ দিন ছেলেকে আনতে জলপাইগুড়ি থেকে সকালেই হাসপাতালে পৌঁছে যান। তিনি জানান, গিয়ে শয্যায় ছেলেকে পাননি। তাঁর দাবি, নার্সরা ডেকে ছেলের আত্মহত্যার কথা জানান। মীরার প্রশ্ন, ছেলে আত্মহত্যা করলেও পরিবারের কাউকে জানানো হল না কেন? স্বাস্থ্যকর্মীরা কি ওয়ার্ডে থাকেন না? তিনি কেঁদে বলেন, ‘‘নজরে রাখলে হয়তো ছেলেটা বাঁচত। সঠিক চিকিৎসার অভাব এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের উদাসীনতা রয়েছে। আমরা যাব কোথায় বলুন?’’ পরিবার সূত্রে খবর, কয়েক বছর আগে জলপাইগুড়ির পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে শিলিগুড়িতে বাড়ি করেন স্মরজিৎ। একটি বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করতেন। দুই মেয়ের একটি সপ্তম, অন্যটি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। গত কয়েক মাস ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া চলছিল বলে দাবি। তাই বাড়ি যাচ্ছিলেন না। নেশাও করতেন বলেও দাবি। এর পরেই পেটের সমস্যায় নিজেই হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন। পরে পরিবারকে জানান।
স্মরজিতের স্ত্রী সরস্বতী চক্রবর্তীর দাবি, হাসপাতালের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড চাওয়া হয়। তিনি সোমবার তা দিয়েছিলেন। কিন্তু স্মরজিৎ কেন আত্মহত্যা করলেন, তার কোনও জোরালো কারণ স্ত্রী বা মা দেখাননি। সরস্বতী জানান, চিকিৎসা কী ভাবে চালাবেন, তা ভেবে হয়তো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রোগী। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের গাফিলতির জন্য শেষ বারের মতো মেয়েরা বাবাকে দেখতে পেল না। কী ভাবে সংসার চলবে, ভেবে পাচ্ছি না।’’ জেলা হাসপাতালের সুপার ছুটিতে থাকায় দায়িত্বে রয়েছেন অমিত দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘শৌচাগারে তো নিরাপত্তারক্ষী থাকতে পারি না। খতিয়ে দেখছি।’’