অভিযান হয়, ধরা পড়ে না ভেজাল জ্বালানি

বাস ও সিটি-অটোয় ব্যবহার হয় ডিজেল। শিলিগুড়ির বাস মালিক সংগঠনের নেতা প্রণব মানি বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ নানা সময়েই ওঠে। তবে কারা করে, তা বলতে পারব না।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৩১
Share:

কাটা তেলে ক্ষতি। নিজস্ব চিত্র

ইঞ্জিনের আধুনিক মান যখন দেশে ষষ্ঠ প্রজন্ম বা বিএস ৬-এ পৌঁছেছে, শহরের সিংহভাগ সিটি অটো তখনও চলছে বিস-২ মডেলের ইঞ্জিনে। মাত্রাছাড়া সেই দূষণের সঙ্গেই বাড়তি ক্ষতি করছে কাটা তেল। ভেজাল জ্বালানির চোরাকারবারে বাচ্চাদের ফুসফুসের ব্যাপক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি কোথাও। কিন্তু শিলিগুড়িতে কাটা তেলের চক্র ছড়িয়ে রয়েছে এনজেপি থেকে ইস্টার্ন বাইপাসের বিভিন্ন এলাকায়। ডিজেলের সঙ্গে ন্যাপথা, কেরোসিন মেশানো তেলের কারবারে কোটি টাকা মুনাফার আড়ালে শহরবাসীর ফুসফুসে ঢুকছে বিষ ধোঁয়া। সব বুঝেও লিখিত অভিযোগের অপেক্ষায় পুলিশ প্রশাসন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদ।

Advertisement

এনজেপিতে ইন্ডিয়ান অয়েলের গোডাউনের উল্টো দিকে রাস্তায় সারি সারি টিনের চালা দেওয়া গুমটি দোকান। খোলা হয় সন্ধের পর। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, এখান থেকেই ডিজেলে ন্যাপথা এবং কেরোসিন মিশছে। তার পর তা শহর লাগোয়া বিভিন্ন গ্যারাজে, গুমটিতে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। সেই সব দোকানে তেল কম দামেই মেলে। ইস্টার্ন বাইপাস বরাবর একাধিক দোকানেও মিলছে কাটা তেল। শিলিগুড়ি কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তার দাবি, এনজেপিতে অভিযান চালানো হয়। বেআইনি তেল পেলে ধরা হয়। কিন্তু কাটা তেলের অভিযোগ তাঁদের কাছে নেই।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে দাবি, শিলিগুড়ি শহরে পরিবহণের চাপ বেশি বলে কার্বন নির্গমন এমনিতেই বেশি। ডিজেলের সঙ্গে ন্যাপথা, কেরোসিনে সেই নির্গমন বদলে যাচ্ছে বিষ বাস্পে। ভেজাল তেল থেকে ট্যান কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইডের মতো মারাত্মক গ্যাস মিশছে বাতাসে। দূষণের পরিভাষায় সিও২ ইক্যুইভ্যালান্ট বলে পরিচিত এই গ্রিন হাউজ গ্যাসগুলি সাধারণ কার্বনের থেকে কয়েক গুণ বেশি ক্ষতিকারক। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদ কাটা তেলের প্রভাব নিয়ে কোনও সমীক্ষা শিলিগুড়িতে করেনি বলেই দাবি করেন কর্তারা।

Advertisement

বাস ও সিটি-অটোয় ব্যবহার হয় ডিজেল। শিলিগুড়ির বাস মালিক সংগঠনের নেতা প্রণব মানি বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ নানা সময়েই ওঠে। তবে কারা করে, তা বলতে পারব না। আমরা আমাদের মালিক এবং চালকদের সব সময় নির্ভরযোগ্য পাম্প থেকেই তেল ভরার পরামর্শ দেই।’’

চিকিৎসকদের দাবি, ডিজেলের সঙ্গে ন্যাপথা বা কেরোসিন পুরোটা পুড়তে পারে না। অর্ধেক জ্বলা সেই সব সামগ্রী ফুসফুসের ক্ষতি ব্যাপকভাবে করছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান সমীর দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘ফুসফুসের ভিতরে বড় নালি এবং অসংখ্য সূক্ষ্ম নালির গায়ে মিউকাস লাইনিং বলে একটা পরত থাকে। এই কাটা তেলের দূষণ সেই পরতটা নষ্ট করে দেয়। নিয়মিতভাবে এমন ধোঁয়ার সম্মুখীন হলে বাচ্চাদের ব্লঙ্কাল অ্যাজমা হতে পারে।’’ চিকিৎসকদের দাবি, শিলিগুড়ি ছাড়াও সব জেলা শহরেই এই ধোঁয়ার প্রভাব বাড়ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement