সভায় বক্তব্য রাখছেন সেলিম। বালুরঘাটে। ছবি: অমিত মোহান্ত
সকাল থেকে ছিল ঝিরঝিরে বৃষ্টি। তবে দুর্যোগ উপেক্ষা করে বালুরঘাটে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের সভার ভিড় নজর কাড়ল। মঙ্গলবার বিকেলে ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ স্লোগান তুলে বালুরঘাট শহরে সেলিমের নেতৃত্বে মিছিল বেরোয়। সাঁওতালি নাচ ও বাজনার তালে পা মিলিয়ে নেতা-কর্মীদের ভিড়ে শহরের রাজপথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। জেলাশাসকের দফতরের সামনে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ দেখান সিপিএম নেতা-কর্মীরা।
রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির সঙ্গে অভিযুক্ত নেতা মন্ত্রী ও আধিকারিকদের শাস্তির দাবিতে ও বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের দাবিতে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার আবেদন তিন সপ্তাহ আগেই প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে জানান হয় বলে সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস দাবি করেন। কিন্তু এ দিন বহু টালবাহানার পরেও, প্রশাসন তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় মঞ্চ বাঁধার অনুমতি দেয়নি বলে নারায়ণ অভিযোগ করেন। শেষে, রাস্তার ধারে একটি টেম্পো গাড়ির উপর খোলা ডালায় উঠে ভাষণ দেন সেলিম।
মালদহ থেকে এ দিন সকালে বালুরঘাট সড়ক পথে আসার সময় বংশীহারির দৌলতপুর, বুনিয়াদপুর ও অন্যান্য জায়গায় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দলের কর্মীরা পুস্পস্তবক দিয়ে রাজ্য সম্পাদক সেলিমকে সংবর্ধনা দেন। দুপুরে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাম কর্মীরা জমায়েত হন বালুরঘাটে সিপিএমের শ্রমিক কৃষক ভবনের সামনে। সিপিএমের দাবি, বৃষ্টির মধ্যেও অন্তত দশ হাজার মানুষ হাজির হয়েছিলেন জমায়েতে। পুলিশের অবশ্য দাবি, লোক হয়েছিল হাজার পাঁচেক। মিছিল যায় বাসস্ট্যান্ড, ডানলপ মোড়, বড় বাজার, কোর্ট মোড় হয়ে জেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে। পুলিশের বিরুদ্ধে আগে থেকে ওই সভায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন সিপিএম নেতৃত্ব।
মিছিল পৌঁছনোর পরে, জেলা পুলিশ-প্রশাসনের অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন আপনারা রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান। মিছিলের কর্মীদের জায়গা দিন। এখানে গরিব কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুবরা এসেছেন লাল ঝান্ডা হাতে। তাঁরা বোমা নিয়ে আসেননি। তাঁদের ন্যায্য দাবি জানাতে প্রশাসনের কাছে এসেছেন। আপনাদের মারধর করতে আসেননি।’’
বাম নেতার অভিযোগ, ‘‘যারা অন্যায় করেছে, তাদের ধরে জেলে পোরা আপনাদের কাজ। কিন্তু আমরা দেখছি, যারা টাকা চুরি করেছে পুলিশ তাদেরই পাহারা দিচ্ছে।’’ বাম কর্মীরা ন্যায্য অধিকারের জন্য, পুলিশ ও সরকারি কর্মচারীর ন্যায্য ডিএর জন্য লড়াই করছেন। তখন পুলিশ বাম কর্মীদের মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে বলেন, ‘‘অভিযোগ সম্পর্কে জানা নেই। বলারও কিছু নেই। নিয়মের মধ্যেই সভার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’’
১০০ দিনের টাকা লুঠ হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সেলিম এ দিন দাবি করেন, ‘‘পঞ্চায়েতে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। অভিযোগ হলেও জেলা প্রশাসন তদন্ত করে না। কেন্দ্র বলছে, ১০০ দিনের প্রকল্পে রাজ্য হিসাব দেয় না। টাকা দেব না। এটা কি কারও পৈতৃক সম্পত্তি? ইচ্ছে হল, ‘দেব’। ইচ্ছে হল, ‘টাকা দেব না’।’’ আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য জেলাশাসককে উদ্যোগী হতে হবে বলে দাবি করেন সেলিম।