পুলিশি ব্যারিকেড টপকে জেলা পরিষদ অভিযানে মহম্মদ সেলিম। জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যের জেলে যাওয়া উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে ‘সব চেয়ে বড় লজ্জা’ বলে দাবি করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। শুক্রবার জলপাইগুড়িতে বামফ্রন্টের জেলা পরিষদ অভিযান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তুললেন সুবীরেশকে বরখাস্ত করার দাবিও। এ দিনই সুবীরেশকে পদ থেকে অবিলম্বে সরানোর দাবিতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে বিক্ষোভও দেখায় সিপিএম।
উপাচার্যের গ্রেফতার প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে সব চেয়ে বড় লজ্জা উপাচার্যের গ্রেফতার। যে কোনও সরকারি আধিকারিক যদি জেলে যান, তা হলে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। কেন এখনও উপাচার্যকে বরখাস্ত করা হল না? আসলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। উপাচার্যকে অবিলম্বে বরখাস্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’’
সিপিএমের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ দিন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটে উত্তেজনা ছড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। গেট ধরে ঝাঁকাতে থাকেন বামকর্মীদের একাংশ। গেট খুলে ফেলেন তাঁরা। তবে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে ঢোকেননি। সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, ‘‘এক জন উপাচার্যের বিরুদ্ধে ষে ভাবে দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে, তা লজ্জার। তাঁকে অবিলম্বে পদ থেকে সরানো হোক। উচ্চ শিক্ষা দফতর বিষয়টি কেন দেখছে না?’’
উপাচার্যকে বরখাস্ত করার যে দাবি সিপিএম নেতারা করেছেন, কার্যত সে দাবির প্রতি সমর্থন শোনা গিয়েছে শিক্ষাবিদদের একাংশের মুখেও। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, ‘‘যখন সিবিআই-তদন্ত শুরু হয়, তখনই উচিত ছিল, উপাচার্যকে অন্তত ছ’মাসের জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া। তা হলেই আজ আমাদের মুখ পুড়ত না।’’
জলপাইগুড়ি শহরের নেতাজিপাড়া থেকে বামেদের মিছিল শুরু হয়। বামেদের মিছিল ঠেকাতে এ দিন পুলিশকে তেমন সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। জেলা পরিষদের কিছুটা আগে, বাবুপাড়া ও ফণীন্দ্রদেব ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। দু’টি ব্যারিকেড ভেঙে বামেদের মিছিল পৌঁছয় জেলা পরিষদের সামনে। রাস্তায় বসে পড়েন বামকর্মীরা।
প্রসঙ্গান্তরে, পুলিশের নিচুতলা ও উপরতলার মধ্যে বিস্তর ফারাকের কথা উল্লেখ করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের কর্তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আইন মেনে কাজ করুন।’’
উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জের এইমস হাসপাতালকে কল্যাণীতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী তৃণমূল ও বিজেপি। এরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুললেও, আসলে ওরা এক।ওদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখন মানুষ খেপে উঠেছেন।’’
জলপাইগুড়ির যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিপিএম জনবিচ্ছিন্ন। তাই ওই দলের নেতারা বিভ্রান্ত হয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন।’’বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, ‘‘রাজ্যে যত দুর্নীতি, আপস করে সরকারে টিকে থাকার প্রবণতা সিপিএমেরই জন্ম দেওয়া। তাই ওদের কথার ভিত্তিতে মন্তব্য করার প্রয়োজন নেই।’’