পিটিআই-এর প্রতীকী ছবি।
কর্মসূত্রে কলকাতার মধ্যমগ্রামে থাকতেন বুনিয়াদপুরের পাঁচ বন্ধু। লকডাউনে কাজ হারিয়ে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েন ওঁরা। শেষে আর কোনও উপায় না দেখে প্রতিবেশীদের সাইকেল নিয়েই বাড়ি উদ্দেশে রওনা দেন। সবার নজর এড়িয়ে চার দিন ধরে প্রায় ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পেরিয়ে বাড়ির কাছে পৌঁছেও শেষ রক্ষা আর হল না, ধরা পড়লেন প্রশাসনের হাতে। তাঁদেরই এক জন, জয়ন্ত বর্মণ বলেন, ‘‘ভিন্ রাজ্য আটকে থাকা শ্রমিকদের মতো অন্য জেলায় যাঁরা আটকে পড়েছেন তাঁদের বাড়ি ফেরাতেও প্রশাসন উদ্যোগী হলে ভাল হত।’’
ওই পাঁচ যুবক, বিভাস কর্মকার, দেবব্রত কর্মকার, পাপাই দে, জয়ন্ত বর্মণ ও সুজয় বর্মণ জানান, তাঁরা সোমবার রাতে রওনা দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের জেলায় পৌঁছন। কিন্তু বাড়ি থেকে কিছু দূরে পুরকর্মীরা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ওঁরা।
বুনিয়াদপুর পুরসভার সামনে তাঁদের থার্মাল স্ক্রিনিং করার পরে চারজনেরই ‘হাই ফিভার’ ধরা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের দিওড়ের বাসিন্দা ওই পাঁচ যুবককে কোয়রান্টিন সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা জানান, কলকাতার মধ্যমগ্রামে একটি গেঞ্জি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। লকডাউন শুরু হওয়ায় খাদ্যাভাব ও অর্থাভাবে চরম সমস্যায় পড়েন। তার পরেই সোমবার রাতে স্থানীয় কয়েক জনের থেকে পাঁচটি সাইকেল চেয়ে বেরিয়ে পড়েন। দীর্ঘ পথ সাইকেল চালিয়ে পরিশ্রান্ত এই যুবকদের এ দিন বুনিয়াদপুরের ধুমসাদিঘির কাছে আটকে দেওয়া হয়।
বিভাসের কথায়, ‘‘যত ক্ষণ পায়ে শক্তি ছিল তত ক্ষণ সাইকেল চালাতাম। রাস্তায় যা জুটত তাই খেতাম। ফেরার আর উপায় না দেখেই সাইকেলে রওনা দিয়েছিলাম।’’ চড়া রোদে দীর্ঘ পথ এ ভাবে আসায় প্রত্যেকেই শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। ‘‘দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিও পাচ্ছি না। কথা বলতে গেলেও মাথা ঘুরছে। শুধু বাড়ি ফিরব এই আশাতেই কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে সাইকেল চালিয়ে গিয়েছি’’—জানালেন পাপাই।