রোজনামচা: রেশনের লাইনে মালদহের উপভোক্তারা। নিজস্ব চিত্র
লকডাউনে কাজ নেই। নেই টাকা। ঘরে ‘বাড়ন্ত’ চালও। সরকারি তরফে নিখরচে চাল মিলছে রেশন দোকানে। কিন্তু তা তুলতে পারছেন না মালদহের লক্ষাধিক সাধারণ মানুষ। কারণ তাঁদের কাছে ডিজিটাল রেশন কার্ড নেই। নেই প্রশাসনের দেওয়া কুপনও। এমন পরিস্থিতিতে পুরনো রেশন কার্ড থাকা গ্রাহকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিজিটাল রেশন কার্ড না থাকা পরিবারগুলির নামের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে ওই পরিবারগুলিকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কেন মিলছে না রেশন? প্রশাসনিক এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পুরনো রেশন কার্ডগুলিকে ডিজিটাল করা হয়েছে। সেই কার্ড বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যাঁদের ডিজিটাল কার্ড তৈরি হয়েছে, অথচ তা বাড়িতে পৌঁছয়নি, তাঁদের জন্য কুপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু পুরনো কার্ডে রেশন দেওয়া হচ্ছে না।” প্রশাসনের বক্তব্য, ডিজিটাল রেশন কার্ড বা কুপন যাঁদের কাছে নেই, তাঁরা পঞ্চায়েতে আবেদন করবেন। পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসনের কাছে সেই তালিকা পাঠালে প্রতি পরিবার মাসে ১২ কেজি করে খাদ্যসামগ্রী পাবে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী মালদহের জনসংখ্যা ৩৯ লক্ষ ৯৭ হাজার ৯৭০ জন। এই ন’বছরে সেই সংখ্যা অনেক বেড়েছে। জেলায় ডিজিট্যাল রেশন কার্ড রয়েছে ৪১ লক্ষ। প্রায় তিন লক্ষ কুপন দেওয়া হয়েছে। ওই হিসেব অনুযায়ী, এখনও জেলায় অনেকের কাছে ডিজিটাল রেশন কার্ড পৌঁছয়নি। সম্প্রতি, ডিজিটাল রেশন কার্ড না থাকা প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার ইংরেজবাজার ব্লক, খাদ্য সরবরাহ দফতর, প্রশাসনিক ভবনে ভিড় জমিয়েছিলেন। একই ভাবে ভিড় জমিয়েছিলেন কালিয়াচক ব্লক অফিসেও।
কেন ডিজিটাল রেশন কার্ড করাননি? ইংরেজবাজারের বুধিয়ার বাসিন্দা পুষ্প মণ্ডল বলেন, “স্বামী, ছেলে ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে। দু’বেলা খাবার জোগাড় করতেই দিন কেটে যায়। কখন পুরনো কার্ড বাতিল হয়ে নতুন রেশন কার্ড হচ্ছে তা জানা ছিল না।” পশ্চিমবঙ্গ রেশন ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের মালদহ শাখার সভাপতি অসিত সাহা বলেন, “পুরোনো কার্ড নিয়ে রেশন দোকানে বহু মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। আর রেশন না পাওয়ায় ডিলারদের ঘেরাও বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে।” মালদহের মহকুমাশাসক (সদর) সুরেশচন্দ্র রানো বলেন, “যাঁদের রেশন কার্ড নেই তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।”