প্রতীকী ছবি
তিন দিনের সাহায্য। ফুরিয়েছে তাও। নেই জ্বালানি কেনার টাকাও। তাই কেউ আটা-চিনি গোলা জল খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তো কারও খাবার ভেজানো চিড়া। এ ভাবে ক’দিন বাঁচব, আদৌ বাঁচব তো—এ প্রশ্নই করছেন মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় আটকে থাকা শ্রমিকরা।
খাবার বা বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করার দাবিতে ১৪ এপ্রিল মুম্বইয়ের বান্দ্রা স্টেশনের পাশে বিভিন্ন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিড় জমিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে মালদহেরও অনেকে ছিলেন। অভিযোগ, ভিড় হঠাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিনই বিষয়টি নিয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সূত্রের খবর, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার—এই তিন দিন বান্দ্রা ছাড়াও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় আটকে থাকা কিছু পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে সরকারি ভাবে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছিল পুলিশ।
তার পর কেটেছে প্রায় এক সপ্তাহ। অভিযোগ, সরকারি খাদ্যসামগ্রী আসা ফের বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁরা জানালেন, দিন তিনেক মহারাষ্ট্র সরকার কিছু শ্রমিকদের খাদ্যসামগ্রী দিয়েছিলেন, এখন আবার একই অবস্থা। জানালেন, পরিচিতদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে কোনরকমে একবেলা খেয়ে দিন কাটছে।
বান্দ্রা পূর্ব এলাকায় দুই ছেলেকে নিয়ে আটকে রয়েছেন কালিয়াচকের হারুন বিশ্বাস পাড়ার আব্দুস সালাম। এ দিন ফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ১২ জন একটি ঘরে থাকি। লাইনে দাঁড়িয়ে বুধবার মাত্র দু’জন ৫ কেজি করে আটা, দু’কেজি ডাল ও কিছু মশলা পেয়েছিলাম। তারপর থেকে দু’বেলা রুটি আর ডাল খাচ্ছিলামর। কিন্তু দু’দিন ধরে জ্বালানি শেষ হয়ে গিয়েছে। সিলিন্ডার ভরার টাকা নেই। তাই আটা আর চিনি গুলে খেয়ে নিচ্ছি। কিন্তু দু’দিনে ওই আটাও শেষ হয়ে যাবে। মহারাষ্ট্র সরকার আর খোঁজ নিচ্ছে না।’’
বান্দ্রা বহরামনগরে থাকা আর এক শ্রমিক সফফর খান বলেন, ‘‘লাইনে দু’দিন ঘুরে তিন দিনের মাথায় আমরা আটা, ডাল ও কিছু মশলা পেয়েছিলাম। আমরা একসঙ্গে ২৫ জন রয়েছি। চার দিনের মধ্যেই সব শেষ হয়ে গেল। এখন পরিচিতদের কাছ থেকে ধার করে কোনওরকমে একবেলা চাল ফুটিয়ে খাচ্ছি।’’
বান্দ্রা পূর্ব এলাকায় থাকা কালিয়াচক ২ ব্লকের বাবলার বাসিন্দা সুফিয়ান মোমিন বলেন, ‘‘হাজার হাজার শ্রমিক কিছুই পাননি। আমরা এক ঘরে ১২ জন থাকি, কেউ কিছুই পাইনি। এখন জল দিয়ে চিড়া ভিজিয়ে একবেলা করে খেয়ে থাকছি।’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘কেউই তাঁদের বাড়ি ফেরার বন্দোবস্ত করছে না। কিন্তু এ ভাবে ক’দিন বাঁচব?’’
মালদহ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের মাধ্যমে খাবার পৌঁছতে চেষ্টা করছি।’’