বাহন: কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখিয়ে তুফানের গাড়িতে বাড়ির পথে মকবুল হোসেন। শনিবার কোচবিহারে। নিজস্ব চিত্র
লকডাউন চলছে। যানবাহন বন্ধ। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যেতেই হবে। কিন্তু টোটো বা অটোরিকশার খোঁজ করেও লাভ হচ্ছিল না। কেউই ঝুঁকি নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছেন না। কেউ আবার চড়া ভাড়া চেয়ে বসছেন। অগত্যা তুফানই ভরসা।
বাড়ির এক কোণে বাঁধা তুফান। ‘আজ বেরোতে হবে’ বলে তার সামনে জোরসে হাঁক দেন মনিব মকবুল হোসেন। কিছু বুঝে ওঠার আগে তুফানও মাথা নাড়তে শুরু করে। ভরসা পান মনিব। এর পর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। তুফান মকবুলের অতি আদরের পোষ্য ঘোড়া। ওই ঘোড়ায় বাঁধা গাড়ি নিয়ে নানা সামগ্রী পৌঁছে যা রোজগার হয়, তা দিয়ে সংসার চলে মকবুলের। সেই তুফানের গাড়িতেই শনিবার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল গেলেন তিনি, তারপর ফিরেও এলেন। হাসপাতালের বাইরে বেশ খানিকক্ষণ একেবারে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। বিপদের সময়ে তুফানের এমনরকম ‘কৃতজ্ঞতা’ বোধে প্রশংসায় পঞ্চমুখ মনিব।
মকবুল বলেন, “তুফান আমার এমনিতেই বড্ড শান্ত। আমার কথা ভীষণ ভাবে মানে। লকডাউনের পর থেকে অবশ্য তুফানের গাড়ি নিয়ে বেরনো হচ্ছে না। যানবাহনের ব্যবস্থা করতে না পেরে তাই বাড়িতে বাঁধা তুফানের কাছে বলি, আজ তোকে নিয়ে বেরোব। কী বুঝেছিল জানি না, তবে কিন্তু তুফান মাথা নেড়েছিল।” মকবুল বলেন, “তখনই মনে হয় তুফান রাজি। তার পরেই বেরিয়ে পড়েছিলাম।” মনিব ও তার স্ত্রী শাহিজাদি বিবিকে নিয়ে বাধ্য ছেলের মতো বাড়িতেও পৌঁছেছে। মকবুলের স্ত্রীর কথায়, “এভাবে তুফানের ভরসায় হাসপাতাল যাত্রা এবার প্রথম।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের হাঁড়িভাঙ্গা এলাকার দয়ালেরছড়ার বাসিন্দা ওই দম্পতি। বেশ কিছু দিন ধরে পেট ব্যথার সমস্যায় ভুগছিলেন মকবুলের স্ত্রী শাহিজাদি। কোচবিহারের মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পেটে পাথরের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। অস্ত্রোপচারের পরামর্শও দেন এক চিকিৎসক। লকডাউনের জন্য তারপর আসা হচ্ছিল না। মকবুল বলেন, “এর মধ্যে আবার ব্যথাটা একটু হচ্ছিল। তাই হাসপাতাল আসাটাও জরুরি ছিল।”