কাঁটাতারের ওপারে। নিজস্ব চিত্র
কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে ‘জিরো পয়েন্টে’ তাঁদের বসতি। কার্যত বছরভর তাঁরা থাকেন ‘লকডাউনে’-ই। দিনে নির্দিষ্ট তিনটি সময়ে কাঁটাতারের বেড়ার ফটক খুললে বিএসএফের দেওয়া ‘গেটপাস’ নিয়ে আসেন মূল ভূখণ্ডে।
করোনা-সতর্কতায় গত ৬ দিন ধরে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ফটক পুরোপুরি বন্ধ। গেট-পাসেও কাজ হচ্ছে না। ‘জিরো পয়েন্টে’ থাকা ওই বাসিন্দাদের প্রায় সকলেই বিড়ি বেঁধে সংসার চালান। কিন্তু লকডাউনের জেরে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাঁরা। একেই কাঁটাতারের ফটক বন্ধ, তার উপরে কাজ নেই। তাতে বিপাকে পড়েছেন মালদহের বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের ঘেরাটোপে থাকা দুইশত বিঘি, মহব্বতপুর ও হাদিনগরের শ’দেড়েক পরিবার।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, কাঁটাতারের ফটক বন্ধ থাকায় তাঁরা রেশনের খাদ্যসামগ্রী নিতেও মূল ভূখণ্ডে আসতে পারছেন না। কার্যত অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত, প্রশাসন বা বিএসএফ সাহায্য করছে না বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁটাতারের বেড়ার ও পারে থাকা শ’দেড়েক পরিবার মূল ভূখণ্ডে যাতায়াত করেন বেড়ার ১২ ও ১৩ নম্বর ফটক দিয়ে। এলাকার বাসিন্দাদের নালিশ, ৬ দিন ধরে কাঁটাতারের বেড়ার ফটক ‘সিল’ করে দিয়েছে বিএসএফ। দুইশত বিঘির জিরো পয়েন্টের বাসিন্দা ভক্তি মণ্ডলের কথায়, ‘‘লকডাউনের আগে পর্যন্ত বিড়ি বাঁধার কাজ চলছিল। প্রতি হাজার বাঁধলে মিলত দেড়শো টাকা। লকডাউনের পর থেকে কাজ বন্ধ। তার উপরে কাঁটাতারের গেট বন্ধ থাকায় সরকারি তরফে দেওয়া খাদ্যসামগ্রী নিতে পারছি না।’’ এলাকাবাসীর একাংশের আরও অভিযোগ, মূল ভূখণ্ডে থাকা আত্মীয়-স্বজন রেশন দেওয়া খাদ্যসামগ্রী তুলে কাঁটাতারের বেড়ার ফটকে জিরো পয়েন্টে থাকা পরিজনদের দিতে এলেও তাঁদের ফিরিয়ে দিচ্ছে বিএসএফ।
বৈষ্ণবনগরের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘কাঁটাতারের ও পারে থাকা তিনটি গ্রামের বাসিন্দারা লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তার উপরে ফটক বন্ধ থাকায় সমস্যা বেড়েছে। তাঁদের বিষয়ে উদাসীন প্রশাসন।’’
সদর মহকুমাশাসক সুরেশচন্দ্র রানো অবশ্য বলেন, ‘‘ওই বাসিন্দাদের কাছে যাতে রেশন পৌঁছয় সে বিষয়টি বিএসএফের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত করা হচ্ছে।’’ বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাঁটাতারের বেড়ার গেট সিল করা হয়েছে।’’