অনিয়ম: ১) প্রধাননগর থানার সামনেই খোলা রয়েছে চা-পুরির দোকান।
বেশ কয়েক দিন পরে ফের পূর্ণ লকডাউন। তা-ও আবার ৪৮ ঘণ্টার। তারই প্রথম দিনে সকাল থেকে পথে পথে পুলিশের নজরদারি যথেষ্ট ছিল বলে দাবি করেছেন পুলিশকর্তারা। যদিও বাস্তবে লকডাউন বিধি আর স্বাস্থ্যবিধি ভাঙার অভিযোগ উঠেছে একাধিক জায়গা থেকে। বিশেষ করে বড় রাস্তা থেকে গলি পথে বিধি ভাঙার অভিযোগ উঠেছে বেশি। বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে শহরে গ্রেফতার একশোর বেশি অভিযুক্ত। শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসি (সদর) জয় টুডু বলেন, ‘‘গ্রেফতারি চলছে। কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা। আরও কড়া নজর দেওয়া হবে।’’
গরম শিঙাড়া
বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ ভক্তিনগর থানার ১০০ মিটারের মধ্যেই চেকপোস্ট মোড়ে খোলা ছিল একটি মিষ্টির দোকান। কাছে যেতেই দোকানি জানালেন, গরম শিঙাড়া হবে। তবে দাঁড়িয়ে খেতে হবে! ময়রা ছাঁচে ফেলে তৈরি করছেন সন্দেশ। কয়েক জন মিস্ত্রি হাতুড়ি-ছেনি নিয়ে কাজ করছেন। অনেকের মাস্ক নেই। বিশেষ লকডাউনে দোকান খোলা কেন? ম্যানেজার অমিত বড়ুয়ার জবাব, ‘‘বন্ধের দিনে একটু টিফিন না করলে মানুষ কোথায় যাবে? আমরা তো অন্যায় কিছু করছি না।’’
চা, জলখাবার
স্টেশন ফিডার রোড জলপাই মোড় ট্র্যাফিক গার্ডের দফতর। মোড়ে নাকা চেকিংয়ে আটকানো হচ্ছে অনেককেই। সেখান থেকে মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যে নির্মল মোদকের চায়ের দোকান তখনও খোলা। দোকানে ভিড় করেছেন কিছু শ্রমিক। কারও মাস্ক থুতনিতে, কারও মাস্ক নেই। মিলন বলেন, ‘‘গরিব মানুষ। দোকান না খুলে উপায় নেই।’’ একই রাস্তায় শিলিগুড়ি থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দু’টি রেস্তোরা খোলা। কাছে যেতেই পরপর ঝাঁপ নামিয়ে ফেললেন দোকানিরা। পরে তাঁরা জানান, খাবার ‘ডেলিভারি’ করা হয় বলে খোলা রাখা হয়েছে দোকান।
লকডাউন উপেক্ষা করেই লটারির পসরা সাজিয়ে বসেছে লটারি বিক্রেতা। শিলিগুড়ি সুভাষপল্লি বাজার এলাকায়।
বাজারহাট
সকালে শিলিগুড়ি শহরের কোথাও আনাজ বা মাছ বাজার বসতে দেখা যায়নি। তবে ঝংকার মোড় এলাকায় কয়েক জন মাছ ব্যবসায়ী দোকান সাজিয়ে বসেন। তাঁদের এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকিদের তুলে দেওয়া হয়। ঘোঘোমালি মেন রোড, গেটবাজার এবং স্টেশন ফিডার রোডে কিছু ফুলের দোকান নজরে এসেছে। নজরদারি ছিল কম।
লটারি
যে কোনও রকমের লকডাউনেই শিলিগুড়িতে লটারি বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। অন্যান্য বিশেষ লকডাউনের মতো এদিনও ঘোঘোমালি মেন রোডে নজরে এলো একাধিক জায়গায় বিক্রি হচ্ছে লটারি। কোথাও টেবিল পেতে, কোথাও পকেটের মধ্যে লুকিয়ে চলছে বেচাকেনা। রবীন্দ্রনগরের লটারি বিক্রেতা ছোটন দত্ত বলেন, ‘‘আগে টোটো চালাতাম। উঠে গিয়েছে। লটারি ডিস্ট্রিবিউটরেরা বিলি করছে, তখন আমাদের বিক্রি তো করতেই হবে। না হলে সংসার চলবে না।’’
ক্রিকেট-ফুটবল
৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে প্রধাননগর থানা এলাকায় চম্পাসারিতে চলছিল ফুটবল খেলা। ভক্তিনগর থানা এলাকায় উত্তরবঙ্গের আইজির দফতর লাগোয়া ইন্দিরা গাঁধী ময়দানে বসেছিল ক্রিকেটের আসর। দর্শকদের ভিড়ে ভাঙছিল লকডাউন বিধি। লকডাউনে খেলা কেন? কোনও দলই কিছু বলতে চায়নি। একটি দল ছবি তুলতেও আপত্তি জানায়।
কোথায় যাবেন?
প্রধাননগর থানা এলাকার জংশন মোড় লাগোয়া একাধিক বেসরকারি পরিবহণ দফতরের কাউন্টার। কোনওটি অর্ধেক খোলা। কোনওটি একফালি। কেউ ব্যাগ নিয়ে হাজির। কাছে যেতেই ম্যানেজার অরুণকান্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘কোথায় যাবেন?’’ লকডাউনে কাউন্টার খোলা কেন? গাড়ি চলছে? তাঁর ঝতিটি জবাব, ‘‘খোলা নেই তো। আমরা এখানেই থাকি বলে বসে আছি।’’ এর মধ্যে নিজ নিজ কাউন্টারের সামনে থেকে ব্যাগ নিয়ে হাজির সকলকে সরিয়ে দিতে শুরু করেন বাকিরা।
ছবি: স্বরূপ সরকার, বিনোদ দাস