মদনমোহনের রথে ভক্তের ঢল। কোচবিহারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
করোনা পরিস্থিতিতে পর পর দু’বছর কড়াকড়ি ছিল রথযাত্রাতে। বলা চলে, ভক্তশূন্য নিয়মরক্ষার যাত্রা হয়েছিল। তাই এ বার মানুষের উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। এমনিতেই কোচবিহারে মদনমোহন দেবের রথযাত্রা নিয়ে আলাদা আবেগ রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই মদনমোহন দেবের মন্দিরের সামনে ভিড় জমতে শুরু করে। বিকেলে রথযাত্রা শুরু হতেই ভিড় আরও বেড়ে যায়। এ ছাড়া ইস্কন মন্দির-সহ আরও কয়েকটি রথ শহরের রাস্তা পরিক্রমা করে। সব ক’টিতেই উপচে পড়েছিল ভিড়। এবং কোনওটিতেই কোভিড বিধি মানতে দেখা যায়নি কাউকে। প্রশাসনের এক দু’জন আধিকারিক ছাড়া কারও মুখে ছিল না মাস্ক। দূরত্ববিধি পালন করতেও দেখা যায়নি কাউকে। স্যানিটাইজার ব্যবহার তো অনেক দূরের কথা। যা নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তার ভাঁজ দেখা গিয়েছে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কপালে। কোচবিহার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, “আমাদের জেলাতে এখন আর তেমন করোনা নেই। তার পরেও সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। ভিড়ে গেলে বিধি মানতে হবে। সে নিয়ে আমরা প্রচারও করছি।”
গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। চতুর্থ ঢেউয়ের থাবা এসে পৌঁছেছে কোচবিহারেও। বুধবার কোচবিহারের দিনহাটায় এক করোনা আক্রান্ত রোগীর খোঁজ পাওয়া যায়। সচেতনতা অবলম্বন না করলে সেই সংখ্যা বাড়তে যে খুব একটা সময় লাগবে না সে কথা বলছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকদের অনেকেই। করোনার শুরুতে তেমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিল কোচবিহার। করোনার শুরুতে দীর্ঘ সময় গ্রিন জোন ছিল কোচবিহার। পরিযায়ী শ্রমিকরা ফেরা শুরু করতেই সেই চিত্র পুরোপুরি পাল্টে যায়। কোচবিহারের বহু মানুষ কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন। রথযাত্রা উপলক্ষে অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন। তাঁদের অনেকেই রথযাত্রায় যোগ দিয়েছেন। আবার পাশের জেলা তো বটেই, রাজ্য অসম থেকেও প্রচুর মানুষ কোচবিহারের মদনমোহন দেবের রথযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিট নাগাদ বৈরাগি দিঘির পাড়ের মন্দির থেকে মদনমোহন দেবের রথযাত্রা শুরু হয়। তা শহরের নির্দিষ্ট রাস্তা ধরে গুঞ্জবাড়িতে মাসির বাড়ি পৌঁছয়। ওই রাস্তায় হাজারে হাজারে মানুষ রথের দড়ি ধরে হেঁটেছেন। এ ছাড়া গুঞ্জবাড়ির ওই মন্দির ঘেঁষে মেলা বসেছে। সেখানেও ভিড় উপচে পড়েছে। বৈরাগি দিঘির পাড়ের মন্দির ঘেঁষেও বসেছে মেলা। ভিড় হয়েছে সেখানে। কেন মাস্ক পড়েননি? জিজ্ঞেস করলে এক ব্যক্তি উত্তর দেন, “করোনা তো আর নেই। তাই মাস্ক পরে কী হবে?” করোনা যে আবার ফিরছে, সে কথা জানে না ওই ভিড়ের মানুষদের অনেকেই।