প্রতীকী ছবি
দিনটা কী ভাবে কেটে যেত বুঝতেই পারতাম না। আলু পরোটা, রুটি, ভাত, ডাল—অর্ডার দেওয়া রকমারি খাবার নির্দিষ্ট সময়ে তৈরি করে দিতেই সন্ধ্যা হয়ে যেত। কখন সূর্য উঠতো আর ডুবতো বুঝতেই পারতাম না। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের স্টলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে খাবারের দোকান চালাই। প্রতিদিন চম্পাসারি থেকে অটোতে যাতায়াত করি। সকালে দোকানে ঢুকেই ময়দা মাখার কাজ শুরু করতে হতো। দুপুরের জন্য কী রান্না করা যায় সেসব ভাবতে হতো। সহযোগীদের দিয়ে বাজার করা, জল আনা সব কিছুই দেখতে হতো আমাকে। মাঝে মাঝেই মনে হতো একটু বিশ্রাম নেই। এখন কাজের অভাবে হাতদুটো অস্থির হয়ে পড়ছে।
লকডাউনে খাবারের দোকান বন্ধ। বাড়ির ভিতরেই থাকতে হচ্ছে। আমার স্বামী অন্য রাজ্যে কাজ করে। ও আসেনি। আমার দুই মেয়ে কলেজে আর এক ছেলে স্কুলে পড়ে। এখন ওরাও বাড়িতে। তাই ওদের জন্য বিভিন্ন স্বাদের খাবার তৈরি করছি। আগে তড়িঘড়ি করে কিছু একটা বানিয়ে বেরিয়ে যেতাম। কোনও দিন আমাকে রান্না করতে হতো না, মেয়ে করে নিত। ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তেমন কথা বলাও হতো না। এখন তাদের সঙ্গে কথা বলছি, বিভিন্ন গল্প শুনছি। ওরা সমস্যা, প্রয়োজনের কথা জানাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার করোনা সংক্রান্ত খবরও শোনাচ্ছে। কী কী করা যাবে আর কী কী করা যাবে না ছেলে-মেয়েরা বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গেও ফোনে বিভিন্ন সময় কথা বলছি এখন। দোকান খোলার কথা, কী ভাবে দোকানের বিক্রি বেশি হয় সেসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখন আমার দুপুরটা কাটছে মোবাইলে বাংলা সিনেমা দেখে নয়তো ছেলে-মেয়ের সঙ্গে কিছু খেলে। নিয়ম মেনে ঘরের মধ্যেই থাকছি ঠিকই তবুও এর মাঝে কাজের জন্য অস্থির হয়ে রয়েছে মনটা। করোনাসংক্রমণের সমস্যা শেষ হলে সকলের সঙ্গে সবাই সুস্থ থাকতে পারবে। আবার এসবের মাঝেই রোজগারের চিন্তাও হচ্ছে। ভাবছি বাকি দিনগুলি কী ভাবে কাটবে। আর্থিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে।
এখন অবশ্য খুব দরকার হলে ঘরের বাইরে বের হতে হচ্ছে। তবে বেশিক্ষণ থাকছি না। ঘরে ঢোকার আগে ভাল করে পরিষ্কার হয়ে নিচ্ছি। গ্রামের অনেকেই এখনও করোনা নিয়ে তেমন সচেতন নয়। অনেকে মুখে মাস্ক না দিয়ে ঘুরছেন। নিজের উদ্যোগে এক দর্জির সঙ্গে ফোনে কথা বলে ৫০টি মাস্ক করতে দিয়েছি। দ্রুত তৈরি করার তাড়া দিচ্ছি। হলে সেগুলি দেওয়ার ব্যবস্থা করব।