প্রতীকী ছবি।
করোনার প্রকোপে যখন শহরের বেশিরভাগ চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ, সেই সময়ে নিয়মিত রোগী দেখে গিয়েছেন তিনি। এমনকি অসুস্থ হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত। সপ্তাহ তিনেক আগের ঘটনা। চেম্বার থেকে ফিরে ঘরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ভর্তি করা হয়েছিল শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে। টানা এক মাস লড়াইয়ের পর শুক্রবার হেরে গেলেন উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা শহরের চিকিৎসক রতনলাল আগরওয়াল(৬৭)। শুক্রবার সকালে মারা যান তিনি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই চিকিৎসকের প্রথম লালারস পরীক্ষা পজ়িটিভ এসেছিল। সেই রিপোর্ট জানার পরে তাঁকে ১১ জুলাই মাটিগাড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। তাঁর ডায়াবেটিস ছিল। অনেক সময় শ্বাসকষ্টতে ভুগতেন। পরে ২৪ ও ২৬ জুলাই দু’টি করোনা পরীক্ষার রিপোর্টই নেগেটিভ আসে। অর্থাৎ, তাঁর করোনা সেরে গিয়েছিল। নার্সিংহোম সূত্রেই এই তথ্য মিলেছে। তবে তত দিনে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অক্সিজেন দেওয়া হলেও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বিশেষ বাড়ছিল না। তখন তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। শেয পর্যন্ত শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ মারা যান ডালখোলার বাসিন্দা ওই চিকিৎসক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রবীণ এই চিকিৎসক গোয়ালপোখরে সমাজকর্মী হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি বিনে পয়সায় বহু মানুষের চিকিৎসা করতেন। মানুষের সুখে-দুঃখে তাঁদের পাশে দাঁড়াতেন। ফলে এলাকায় রীতিমতো জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবরে ডালখোলা শহর ও আশপাশের গ্রামাঞ্চলে তাই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর তিন ছেলের মধ্যে দু’জন বিদেশে চিকিৎসকের পেশায় যুক্ত। এক ছেলে ডালখোলা শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সূত্রের খবর, ওই চিকিৎসকের স্ত্রীও করোনা আক্রান্ত হয়ে শিলিগুড়ি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ডালখোলা পুরসভার যুগ্ম প্রশাসক সুভাষ গোস্বামী বলেন, ‘‘রতনবাবুর মৃত্যুতে শহরের চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতি হল। করোনার আবহে তিনি নিয়মিত রোগী দেখে গিয়েছেন।’’ স্থানীয়দের অভিযোগ, যে হারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেই মতো লালারস পরীক্ষা করা হচ্ছে না। যদিও পুরসভার কর্তাদের দাবি, বেশি করে পরীক্ষার দাবি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
পুরসভার যুগ্ম প্রশাসক সুভাষ গোস্বামী বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ রুখতে শহরে দুই দফায় ১২ দিন লকডাউন এবং রাজ্য সরকারের তরফে দু’দিন পূর্ণ লকডাউন হওয়ার ফলে সংক্রমণ ঠেকানো গেছে।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আগের তুলনায় করোনা পরীক্ষা অনেক বেড়েছে।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)