Oxygen

ঘুরপথে ‘চুরি’ প্রাণবায়ু

অনেক ক্ষেত্রেই এ ভাবে অক্সিজেন বাবদ অবিশ্বাস্য রকমের খরচ দেখানো হচ্ছে বলে বেশ কিছু রোগীর পরিবারের অভিযোগ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২১ ০৬:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক করোনা আক্রান্ত দম্পতির চিকিৎসায় হাই ফ্লো অক্সিজেন বাবদ মোট তিন লক্ষ টাকার বিল করেছিল একটি বেসরকারি নার্সিংহোম। কিন্তু কী হিসেবে এত বেশি বিল, তা দেখতে গিয়ে মৃত ওই দম্পতির পরিবার কিছুতেই বুঝে উঠছে পারছে না। কারণ, দম্পতির ২টি বিলের একাধিক জায়গায় হাই ফ্লো অক্সিজেনের কথা বলে কখনও প্রতি ঘন্টায় ২৪০ টাকা, কখনও ৩৬০ টাকা, কখনও ৪৮০ টাকা, কখনও ৭২০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ির বাসিন্দা ওই দম্পতির চিকিৎসা বাবদ মোট বিল হয়েছিল ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি। তবে শেষপর্যন্ত বাঁচানো যায়নি তাঁদের। ২০ ও ২৪ মে মহিলা ও তাঁর স্বামী মারা যান। দম্পতির চিকিৎসায় মাত্রাতিরিক্ত বিল নিয়ে খবর বেরোতেই হইচই পড়ে যায় শিলিগুড়িতে।

Advertisement

অনেক ক্ষেত্রেই এ ভাবে অক্সিজেন বাবদ অবিশ্বাস্য রকমের খরচ দেখানো হচ্ছে বলে বেশ কিছু রোগীর পরিবারের অভিযোগ। রোগীর পরিবারের বক্তব্য, বিলে যে পরিমাণ অক্সিজেন দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবে তা দেওয়া হয়নি। নার্সিংহোম রোগীর সে সব কথায় কর্ণপাত না করে ছুটি করিয়ে দিলে বাধ্য হয়ে পুলিশে অভিযোগ করছে পরিবার।

কোভিড পরিস্থিতিতে রোগীর অক্সিজেন এ ভাবেই চুরির অভিযোগ উঠেছে নার্সিংহোমগুলোর একাংশের বিরুদ্ধে। বিলে যত ঘন্টা এবং যে পরিমাণ অক্সিজেন দেওয়ার হিসেব দেখানো হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে সেই পরিমাণ দেওয়া হয়েছে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। অথচ, বিল এক পয়সাও রেহাই দেওয়া হচ্ছে না রোগীর পরিবারকে। সব চেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হল, রোগীদের হাই ফ্লো অক্সিজেন দেওয়ার ক্ষেত্রে খরচের কোনও নিয়ম-নীতিই নেই। নার্সিংহোমগুলোর বিলে অক্সিজেনের ইচ্ছেমতো দামই মেটাচ্ছেন পরিবারের লোকেরা। প্রতি ঘণ্টায় এবং নার্সিংহোম ভেদে অক্সিজেনের দামের ব্যাপাক ফারাক কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাস্তবে কত ঘণ্টা এবং কতটুকু অক্সিজেন রোগীকে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে রোগীর পরিজনদের মধ্যে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

Advertisement

দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে, অক্সিজেনের কোনও দর সরকারি ভাবে বলা নেই। সরবরাহকারীর কাছ থেকে যে দরে নার্সিংহোম অক্সিজেন কিনবে কিছুটা বেশি দামে তারা দেবে। কিন্তু তাই বলে অস্বাভাবিক বা মাত্রাছাড়া দাম তো হতে পারে না। এমন হলে নিশ্চয়ই তা দেখা হবে।’’ শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর দেবশঙ্কর সাহার অভিযোগ, ‘‘পরিচিতরা অনেকেই কোভিড আক্রান্ত হয়ে কেউ প্রধানগরের কোনও নার্সিংহোমে বা মাটিগাড়ার নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁদের অক্সিজেন দেওয়ার নাম করে লক্ষাধিক টাকা বিল করা হয়েছে। এক একটি নার্সিংহোম অক্সিজেনের এক এক রকম বিল করছে। বিষয়টি অবিলম্বে স্বাস্থ্য দফতরের দেখা উচিত।’’ জলপাইগুড়ির এক আইনজীবী ভর্তি ছিলেন শিলিগুড়ির প্রধাননগরের একটি নার্সিংহোমে। পাশের শয্যায় ভর্তি তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, রাতে সিলিন্ডারে অক্সিজেন ছিল না, তিনি ছটফট করছিলেন। নার্স, কর্মীদের ডেকেও সুরাহা হয়নি। সকালে সিলিন্ডার বদলানো হয়। কিন্তু বিলে কম অক্সিজেন দেওয়ার বিষয়টিই ছিল না।

শিলিগুড়ির এক মহিলাও ভর্তি ছিলেন শহরের একই এলাকার নার্সিংহোমে। তাঁর মেয়ে সম্প্রতি থানায় অভিযোগ জানান, তাঁর মায়ের অক্সিজেন স্তর নীচে নেমে যায়। অক্সিজেন স্যাচুরেশন নিয়ে মিথ্যা বলা হচ্ছিল তাঁকে। রোগী নিজেই তা জানান। তাঁর অভিযোগ, চিকিতসক অক্সিজেন ঠিক মতো দেওয়ার কথা বললেও দেওয়া হয়েছে কম মাত্রায়। প্রতিবাদ করায় রোগীকে জোর করে ডিসচার্জ করানো হয়। এমনকি, ভয়ও দেখানো হয় তাঁদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement