প্রিয়া, অনুশ্রী ও লিনেট। নিজস্ব চিত্র।
এক জন ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অন্য দু’জন সাত মাসের। ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে করোনা পরিস্থিতিতেও কাজ করছেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নার্সিং স্টাফ প্রিয়া ছেত্রী। কালিম্পঙের বাড়ি ছেড়ে হাসপাতালের আবাসনে থেকেই কর্তব্য পালন করছেন তিনি। আর ময়নাগুড়ি চূড়াভাণ্ডার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নার্সিং স্টাফ লিনেট বাগও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ উপেক্ষা করে রোগীদের পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। ডুয়ার্সের মেটেলির নাগেশ্বরী চা বাগানের বাসিন্দা লিনেটের ঠিকানা এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসনই।
অন্য দিকে, ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা নার্সিং স্টাফ অনুশ্রী কীর্তনিয়াও কোভিড কন্ট্রোল রুমে ডিউটি করছেন ময়নাগুড়ি হাসপাতালে। শ্বশুরবাড়ি ধূপগুড়িতে। এই অবস্থায় ধূপগুড়ি থেকে প্রতি দিন যাতায়াত করা সমস্যার। তা-ই বর্তমানে ময়নাগুড়ি আনন্দনগরের বাপের বাড়িতে থেকেই হাসপাতালের কোভিড কন্ট্রোল রুমে কাজ করছেন তিনি।
গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে জলপাইগুড়ি কোভিড হাসপাতালে ডিউটি করতে হয়েছিল প্রিয়াকে। লিনেট ও অনুশ্রী ময়নাগুড়ি পলিটেকনিক কলেজের সেফ হোমে ডিউটি করেছেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার সময় থেকেই অন্তঃসত্ত্বা তিন নার্সিং স্টাফ ঝুঁকি নিয়েও কর্তব্য পালন করছেন।
প্রিয়া বলেন, ‘‘স্বামী অসীম সেনা জওয়ান। এখন রয়েছেন মধ্যপ্রদেশে। দেশরক্ষার জন্য ওঁর লড়াই আর মানুষের জীবনরক্ষায় আমার লড়াই চলছেই। প্রতি দিনই হাসপাতালে ভর্তি প্রসূতিদের করোনা পরীক্ষাও করতে হচ্ছে। যত সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছি।’’
লিনেটের স্বামী বাহাদুর ইন্দোর কলকাতা পুলিশে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘‘স্বামী সম্প্রতি ছুটিতে এসে দেখা করে গিয়েছেন। মা ও পরিবারের লোকেরাও এই অবস্থায় ছুটি নিতে বলেছেন। কিন্তু কর্তব্য পালন না করে থাকতে পারব না। তাই এই অবস্থাতেও কাজ করছি।’’
অনুশ্রীর স্বামী দেবর্ষি ঘোষ ধূপগুড়ি মহিলা কলেজের ভুগোল শিক্ষক। অনুশ্রী বলেন, ‘‘গত বছরেও করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করেছি। এ বছরেও কাজ করতে হচ্ছে। যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে চেষ্টা করছি। ভয় পেলে চলবে না আমাদের। মানুষকে সুস্থ করার ব্রত নিয়েই এগোচ্ছি।’’
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক লাকি দেওয়ান বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্সিং স্টাফ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কাজ করে চলেছেন। ওই তিন অন্তঃসত্ত্বা নার্সিং স্টাফকে কুর্নিস জানাই।’’