অবাধে: ব্যারিকেড গলে যাতায়াত। শিলিগুড়ি পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ডিআই ফান্ড মার্কেট এলাকায়। সোমবার। ছবি: স্বরূপ সরকার
শুরুতে পরিকাঠামো, যন্ত্রাংশের মতো অনেক ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল। ছিল না অটোমেটেড আরএনএ এক্সট্রাক্টর। এই যন্ত্রে দিনে ১৫০০-এর বেশি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। দু’টি রিয়েল টাইম পিসিআর এবং সিবিন্যাট এবং ট্রুন্যাট যন্ত্রের উপর নির্ভর করেই কাজ করতে হত। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিদিন ১২০০-১৬০০ নমুনা পরীক্ষা হত। অনেক সময় জমে থাকা নমুনার ‘ব্যাক লগ’ শেষ করতে দুই হাজার করেও পরীক্ষা হয়েছে একদিনে। অথচ এখন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের পরীক্ষাগারে যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে। আছে অটোমেটেড আরএনএ এক্সট্র্যাক্টরও। তবু সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এখন নমুনা পরীক্ষা রোজ গড়ে ৭০০-তে এসে ঠেকেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, পরিকাঠামো বৃদ্ধির পরে কেন নমুনা পরীক্ষার হার কমে গেল? নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’-এর ঘাটতি হচ্ছে বলেই মত চিকিৎসকদের একাংশের।
পরিযায়ী শ্রমিকরা যখন ফিরতে শুরু করেন, উত্তরবঙ্গে করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুশান্ত রায় নিজেই তৎপর হয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অত্যাধুনিক ‘অটোমেটেড আরএনএ এক্সট্র্যাক্টর’ যন্ত্র নিয়ে আসেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। তখন আশা ছিল, রোজ দুই থেকে আড়াই হাজার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। বাস্তব চিত্র কিন্তু অন্য কথা বলছে। সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘আগে উপসর্গহীনদেরও পরীক্ষা হচ্ছিল। এখন উপসর্গযুক্ত রোগী এবং করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরই শুধু পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাতে সংখ্যা কিছুটা কমেছে।’’ সংক্রমিত এলাকায় বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করে উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আরও বেশি করে কেন পরীক্ষা করানো হচ্ছে না, তার জবাব কিন্তু মেলেনি।
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে বেশি হারে নমুনা পরীক্ষা করাতে চাওয়া হচ্ছে না— এমন অভিযোগও তুলেছেন চিকিৎসকদের কেউ কেউ। তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ মার্চ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভাইরোলজি রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি (ভিআরডিএল)-তে করোনা সংক্রমণ নির্ণয়ের পরীক্ষা চালু হয়। উত্তরবঙ্গের সমস্ত জেলা থেকেই নমুনা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আসত। পরে মালদহ মেডিক্যালে পরীক্ষা চালু হয়। তখন থেকে কেবল কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, দার্জিলিং জেলা, ইসলামপুর এবং সিকিম থেকে নমুনা পাঠানো হত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। জেলাগুলি থেকে পাঠানো নমুনার ‘ব্যাকলগ’ জমে গেলে রোজ সব মিলিয়ে পাঁচশোর মতো নমুনা পাঠাতে বলা হয়। তাতে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি থেকে প্রয়োজন থাকলেও বেশি নমুনা পাঠানো সম্ভব হচ্ছিল না বলে অভিযোগ। সে সময়ই অটোমেটেড আরএনএ এক্সট্রাক্টর যন্ত্র আনা হয়। তাতে ফের পরীক্ষার হার বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছিল। পরে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের মতো জেলাগুলোর অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চাপ কমেছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে।
এর পাল্টা মতও চালু রয়েছে চিকিৎসক মহলে। সেই অংশের বক্তব্য, এখন যেখানে শিলিগুড়ি আর জলপাইগুড়ির নমুনা পরীক্ষা করলেই হয়, সেখানে দুই শহরেরই প্রচুর নমুনা পরীক্ষা করা যেতে পারত। সেটা জরুরিও ছিল, কারণ, শিলিগুড়ির করোনা সংক্রমণ এখন আশঙ্কাজনক। তাই এই শহর থেকে প্রচুর পরীক্ষা করা দরকার। প্রশ্ন উঠেছে, তা করা হচ্ছে কোথায়?
গত কয়েক দিন ধরে শিলিগুড়ি শহর থেকেই প্রতিদিন চল্লিশের বেশি সংক্রমণের খবর মিলছে। এ সময় কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের জন্য বেশি মাত্রায় নমুনা পরীক্ষা জরুরি বলে চিকিৎসকরা জানান। অথচ বর্তমানে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে দুই-এক দিন ১০০০ নমুনা পরীক্ষা হলেও বেশিরভাগ দিনই মাত্র সাতশোর মতো নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে বলে অভিযোগ।