ফাইল চিত্র
গোটা দেশের সঙ্গে ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতেও ঝিমুনি চলেছে। নতুন অর্থবর্ষ শুরুর মুখে যোগ হয়েছে লকডাউনও। সব ক্ষেত্রেই তাই শুরু হয়েছে টিকে থাকার লড়াই। আজ নজরে চা শিল্প।
বাগানে চা গাছের দৈর্ঘ্য বাড়ছে। এদিক ওদিক থেকে উঁকি দিচ্ছে আগাছা। দৃশ্যতই ভাল নেই ফার্স্ট ফ্লাশ। তা সে পাহাড়েই হোক বা তরাই-ডুয়ার্সে। প্রশ্ন উঠেছে, এ বার কি তবে প্রথম ফ্লাশকে বিসর্জনই দিতে হবে?
চা শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানাচ্ছেন, উত্তরবঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাগান ডুয়ার্সে। তার পরে পাহাড় এবং তরাই। গত বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডুয়ার্সে চায়ের উৎপাদন ছিল ২১ লক্ষ কেজির কিছু বেশি। এ বছর একই সময়ে সেই উৎপাদন ৭ লক্ষ কেজি। তরাইয়ের ক্ষেত্রে গত বছর উৎপাদন ছিল ১৯ লক্ষ কেজি, এ বছর দু’লক্ষ ৭০ হাজার কেজি। দার্জিলিং চায়ের অবস্থা সব থেকে খারাপ। টি বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী গত বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যা ছিল ১০ হাজার কেজি, এ বছর তা এখনও অবধি শূন্য। এই পরিস্থিতিতে দার্জিলিং পাহাড়ে ফার্স্ট ফ্লাশ কবে তোলা হবে এবং কবে বিদেশে যাবে, বা আদৌ যেতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় চরমে। শনিবার চা বাগানে ২৫ শতাংশ কর্মীকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে রাজ্য। তার পরে চা তোলা শুরু হবে কিনা, জল্পনা শুরু হয়েছে।
দার্জিলিং ফার্স্ট ফ্লাশের দাম বিদেশের বাজারে গড়ে ২-৪ হাজার টাকা প্রতি কেজি। বাকি তরাই ও ডুয়ার্সের চা নিলামে গত ফেব্রুয়ারিতে গড়পরতা ১২০ টাকা প্রতি কেজি দাম পেয়েছিল।
চা শিল্পের উপরে উত্তরবঙ্গের প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। এখন এখানে বড়র সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে মাঝারি ও ছোট চা বাগান। এই শিল্পে মন্দা আসতে শুরু করে গত বছর পুজোর পর থেকে। চা মালিকদের একাংশের দাবি, এই মন্দার বড় কারণ তড়িঘড়ি জিএসটি চাপিয়ে দেওয়া, শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট করে সেখানে সরাসরি মজুরির টাকা না পাঠিয়ে নগদে দিলে কর কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা। বছরের শেষ দিকে চায়ের গড় দামও অনেকটা কমে যায়। সেই ধাক্কা সামাল দিতে না দিতেই জুড়ে বসেছে করোনা সংক্রমণের ধাক্কা।
চা মালিকদের সংগঠনগুলি জানাচ্ছে, চা উৎপাদন এবং বাগানের খরচে বিরাট তারতম্য এসেছে। সেখানে চা পর্ষদের কার্যকরী ভূমিকা দরকার। গুণমান, বাগানের পরিচর্যা, গ্রিন টি-সহ নানা প্রকল্পের জন্য ভর্তুকি ঘোষণা করে চা পর্যদ। কিন্তু বহু বাগান প্রকল্পে টাকা লগ্নি করেও ভর্তুকি পায়নি। এখন তো লকডাউনের জন্য বাগানে কাজ বন্ধ, উৎপাদন বা রফতানি নেই। কিন্তু শ্রমিক মজুরি থেকে কারখানা, বাগানের পিছনে স্থায়ী খরচ যদি চালাতে হয়, তা হলে আগামীতে পরিস্থিতি ভয়াবহ দাঁড়াবে, আশঙ্কা অধিকাংশ বাগান মালিকের।
দেশের চায়ের ৩৫ শতাংশ উত্তরবঙ্গে তৈরি হয়। বছরের প্রায় ৩৪ শতাংশ চা মরসুমের শুরুতেই উৎপাদিত হয়। এবছর এখন পর্যন্ত মাসখানেক চা তোলা সম্ভব হয়েছে। চা শিল্পে জড়িতদের দাবি, অন্তত ২০ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি শুধু ফার্স্ট ফ্লাশে। সেকেন্ড ফ্লাশের চা পাতা তোলাও অনিশ্চিত। সেকেন্ড ফ্লাশের পাতাও যদি তোলা না গেলে ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে, দাবি চা শিল্পের।
সিসিপিএ-এর আহ্বায়ক অমিতাংশু চক্রবর্তীর কথায়, “এখনও হিসেব করতে পারছি না, কত ক্ষতি হবে। উত্তরবঙ্গের চা অর্থনীতির অন্যতম অংশ ছোট চাবাগানগুলি। অনেক বাগান বন্ধ হ তে পারে।’’ তেমনিই টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গের সচিব সুমিত ঘোষ বলেন, ‘‘কেন্দ্র, রাজ্য সরকার এবং চা পর্ষদকে গুরুত্ব দিয়ে একটা অর্থনৈতিক প্যাকেজ তৈরি করতে হবে। নইলে চা শিল্পকে বাঁচানো যাবে না।’’