প্রতিরোধ: জ্বরের চিহ্ন খুঁজতে ভরসা যন্ত্র। তা নিয়েই পরীক্ষা স্বাস্থ্যকর্মীদের। শনিবার হিলি সীমান্তে। ছবি: অমিত মোহান্ত
প্রথমে ‘স্ক্যানার’ দিয়ে পরীক্ষা। তার পরেই মিলছে এ দেশে ঢোকার ছাড়পত্র। করোনা-আতঙ্কে মানুষের পারাপারে এমনই নিয়ম জারি ভারত-নেপাল সীমান্তে।
শনিবার তা দেখা গেল বিহারের কিসানগঞ্জ জেলার দু’টি চেকপোস্টে। একটি ঠাকুরগঞ্জ ব্লকের গলগলিয়ায়, অন্যটি বাহাদুরগঞ্জের দিঘলব্যাঙ্কে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ওই দুই সীমান্ত দিয়ে এত দিন পণ্যের আদানপ্রদানে নজরদারি চালানো হত। চলত তল্লাশিও। মারণ-ভাইরাস রুখতে এখন পরীক্ষা চলছে সীমান্ত পারাপারকারী লোকেদেরও। কিসানগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্দেশেই দু’টি চেকপোস্টে এমন ব্যবস্থা।
কিসানগঞ্জে এই দুই চেকপোস্ট ঘিরে নদী-সীমান্ত। গলগলিয়ায় রয়েছে মেচি নদী, দিঘলব্যাঙ্কে কুন্তয় নদী। নদীর ও পারে নেপাল। সেতুই বেঁধেছে দুই দেশকে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এই দুই সীমান্তে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি রয়েছেন এসএসবি এবং জেলা প্রশাসনের বিপর্যয় মোকাবিলা প্রতিনিধি দল। কিসানগঞ্জের জেলা শাসক আদিত্য প্রকাশ জানান, করোনাভাইরাস রুখতে সীমান্তে যাতায়াতে কিছুটা রাশ টানা হয়েছে। নেপাল সীমান্ত পেরিয়ে আসা লোকেদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সীমান্তের চেকপোস্টে এক জন চিকিৎসক থাকছেন। ‘স্ক্যানার’ দিয়ে লোকেদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। স্বাস্থ্যপরীক্ষা ঠিকমতো করা হচ্ছে কিনা, তার নজরদারিতে থাকছেন এক জন ডেপুটি ম্যজিস্ট্রেট। সন্দেহজনক কোনও রোগীর হদিস মিললে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন জানিয়েছ, এ দেশে থেকে কেউ নেপালে গেলে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা যেমন করা হচ্ছে, তেমনই নেপাল থেকে এ দেশে আসা মানুষেরও স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হচ্ছে। সকলের নামই নথিভুক্ত রাখা হচ্ছে। টেরাগছ সীমান্তেও বসানো হয়েছে ‘স্কিনিং পয়েন্ট’। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কিসানগঞ্জ জেলা হাসপাতালে পৃথক ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নেপালে এ দেশ থেকে যাওয়া লোকেদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করছেন সে দেশের স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হচ্ছে পণ্যবাহী গাড়ির চালকদেরও।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, নেপাল সীমান্ত এলাকার গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সীমান্ত এলাকার স্কুলগুলি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কোনও মেলা বা জলসার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে। চালু করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। কিসানগঞ্জ এমজিএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২০টি ‘আইসোলেশন শয্যা’র ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কিসানগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী খাগড়া মেলা শনিবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে মেলা শুরু হয়েছিল। একমাস ধরে মেলা চলার কথা ছিল। জেলা প্রশাসনের দাবি, মেলায় ভিড় হয়। তাই এমন সিদ্ধান্ত।
তবে জেলাশাসক বলেছেন, ‘‘করোনা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। এখনও পর্যন্ত জেলায় করোনা সন্দেহে কোনও রোগীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।’’