লাইন: শনিবার শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে। ছবি: বিনোদ দাস।
‘ড্রাই রান’ হয়েছে। এখন প্রতিষেধক আসার অপেক্ষা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গে করোনা সংক্রমণের হার প্রায় ১ শতাংশে নেমে যাওয়ায় অন্য একাধিক কারণে চিন্তিত বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁদের প্রধান চিন্তা, সংক্রমণ কমে যাওয়ার ফলে প্রতিষেধক টিকা নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ ঠিক মতো এগিয়ে আসবেন তো? এমনও প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি করোনা প্রতিরোধে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের শরীরে? যদিও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা না করে এই ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা যে সম্ভব নয়, সেটা মানছেন বিশেষজ্ঞরা।
উত্তরবঙ্গে করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক তথা ওএসডি সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠেছে কি না, তা আন্দাজ করে বলা যাবে না। তার জন্য যে সমীক্ষা, পরীক্ষা প্রয়োজন। অ্যান্টিবডি টেস্ট করে দেখতে হয় কত শতাংশ মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি বা প্রতিরোধ শক্তি গড়ে উঠেছে। সংশিষ্ট দফতর থেকে তার অনুমতি না পেলে করাও যায় না।’’ তবে তাঁর দাবি, নানা ভাবে ক্রমাগত চেষ্টা করায় কিছু মানুষকে সচেতন করা গিয়েছে মাস্ক পরতে, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করতে বা দূরত্ব বিধি মেনে চলতে। সেটাতেও অনেক কাজ দিয়েছে সংক্রমণ কমানোর ক্ষেত্রে। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, সংক্রমণ কমুক বা না-ই কমুক, টিকা এলে তা নেওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞদের একাংশেরও যুক্তি, নতুন স্ট্রেনের হাতে থেকে বাঁচতে টিকাকরণ আবশ্যিক।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান তথা ভাইরোলজি রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক অরুণাভ সরকারের কথায়, ‘‘হার্ড ইউমিউনিটি হল কি না, তা নিয়ম মেনে গবেষণা করার পরই বোঝা যায়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘উত্তরবঙ্গে ক্রমাগত নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো হয়েছে। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা হয়েছে। তার ফল মিলেছে। টেস্ট করে আক্রান্তদের যত বেশি করে আলাদা করে দেওয়া যাবে, তত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে।’’ তাই এখনও বেশি করে টেস্ট চালিয়ে যাওয়া, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহারের দিকে জোর দিয়েছেন তিনিও।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, পুজোর আগে ও ঠিক পরে উত্তরবঙ্গে রোজ ৪০০-৫০০ জন আক্রান্ত হচ্ছিলেন। সংক্রমণের হার একটা সময় ১৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এখন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৫০-৬০ জনে এসে ঠেকেছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের প্যাথলজির চিকিৎসক কল্যাণ খান বলেন, ‘‘হার্ড ইমিউনিটি বলতে ৮০ শতাংশ লোকের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠা। সেটা হওয়া শক্ত। আগে বেছে বেছে লালারস পরীক্ষা করানো হত। এখন সেটা হচ্ছে না বলেই আক্রান্তের হার কমেছে। তবে প্রচুর মানুষ উপসর্গহীন বলে ঘুরছে, পরীক্ষা করাচ্ছে না। সেটা যত বেশি হবে, সংক্রমণের দ্বিতীয় ‘ওয়েভ’ কিন্তু ততটাই বিপজ্জনক হয়ে ফিরবে।’’ তাই সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।