নিজস্ব চিত্র।
বাড়ি ফেরার পথে মা’কে অভিমান করে দাদা বলেছিল, ‘‘তুমি যদি বাড়ি না ফেরো, তা হলে আমি এমন জায়গায় চলে যাব, আমাকে আর খুঁজে পাবে না।’’— দু’চোখে অপার শূন্যতা নিয়ে দাদার স্মৃতিচারণ করছিল বছর তেরোর বিশ্বজিৎ। বৃহস্পতিবার বিকেলে দোমহনিতে বিকানের এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় পড়ে। সেই ট্রেনেই ভাই বিশ্বজিৎকে নিয়ে কোচবিহারের বাড়িতে ফিরছিল দাদা সম্রাট। ভাই বেঁচে গেলেও, বাড়ি ফেরা হয়নি সম্রাটের।
আর্থিক অনটন মেটাতে স্বামী এবং বড় ছেলেকে রেখে ছোট ছেলেকে নিয়ে কাজের সন্ধানে রাজস্থান পাড়ি দেন কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকের কালপানি এলাকার বাসিন্দা মিনতি কারজি। কিন্তু মা ছাড়া আর ক’দিনই বা ভাল লাগে! তাই মা’কে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে ক’দিন আগেই রাজস্থানের জয়পুর গিয়েছিল বছর ১৭-এর সম্রাট। কিন্তু মাস যে তখনও শেষ হয়নি। তখন দুই ছেলেকে কোচবিহারের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন মিনতি। সম্রাটকে মা কথা দেন, মাসের মাইনে পেলেই বাড়ি ফিরবেন।
অগত্যা ছোট ভাইকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় সম্রাট। স্টেশনে দাঁড়িয়ে অভিমান ভরে মা’কে সম্রাট বলেছিল, ‘‘তুমি যদি বাড়ি না ফের, তা হলে আমি এমন জায়গায় চলে যাব, আমাকে আর খুঁজে পাবে না।’’
ভাই বিশ্বজিৎকে নিয়ে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় সম্রাট। প্রায় পৌঁছেও গিয়েছিল বাড়ির কাছাকাছি। ট্রেন তিস্তা সেতু পেরোনোর পর ভাইকে বসিয়ে রেখে সম্রাট গিয়েছিল বাথরুমে। সেই সময় ঘটে যায় দুর্ঘটনা। তার পর থেকে বিশ্বজিৎ আর খুঁজে পায়নি দাদাকে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে দাদার মৃতদেহ সনাক্ত করে বিশ্বজিৎ।
সেই ঘটনার পর কয়েক দিন পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু মা’কে অভিমান ভরে বলা দাদার সেই কথাটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না বিশ্বজিৎ। সত্যিই আর খুঁজে পাবে না সে দাদাকে।