রেশন কার্ড যাচাইয়ের লাইন। —ফাইল চিত্র
এনআরসি-র আতঙ্ক পেয়ে বসেছে। তাই কেউ আর পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। রেশন কার্ডের কাজের জন্য কেউ ছুটছেন ব্লক অফিসে। সেখানে ভিড়ে ঠাসা মানুষ। ভোটার কার্ড যাচাইয়েও একই অবস্থা। এই সুযোগে কোচবিহারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালাল চক্র।
কেউ রেশন কার্ড করে দেওয়ার নাম টাকা হাঁকছে। কেউ অনলাইনে ভোটার কার্ড যাচাই করে দিয়েই ৫০ থেকে ১০০ টাকা নিচ্ছেন। প্রশাসনের তরফ থেকে ওই বিষয়ে নজরদারি শুরু করা হয়েছে। কেউই অবশ্য ওই বিষয়ে অভিযোগ করতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, এই সময়ে কাজ দ্রুত হওয়ার জন্য তাঁরা টাকা খরচ করতে রাজি রয়েছেন। কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “তেমন কোনও অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অসমের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে গোটা দেশ তোলপাড়। ১৯ লক্ষ মানুষের নাম নেই অসমের নাগরিকপঞ্জি। সেই ধাক্কা লেগেছে কোচবিহারেও। অসম লগোয়া কোচবিহার জেলা। এই জেলার বহু মানুষ বিবাহ ও কর্মসূত্রে অসমের বাসিন্দা। তাঁদের বড় অংশের নাম নেই অসমের নাগরিকপঞ্জিতে। এই অবস্থায় রাজ্য ভোটার কার্ড যাচাই ও শিবির করে রেশন কার্ডের সমস্যা সমাধানের কাজ শুরু হওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। বাসিন্দাদের অনেকেরই ধারণা হয়, এনআরসি চালুর প্রথম ধাপ ওই কাজ। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই নিজেদের নথিপত্র সঠিক ভাবে রাখার কাজ শুরু করেন। অভিযোগ, সেই সুযোগেই মাঠে নামে দালালচক্র। রেশনে একসময় দালালচক্র নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ছিল। গত কয়েক বছর ধরে দালালচক্র অনেকটাই কম যায়। এ বারে ফের ওই চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। এমনকি রেশন কার্ডের জন্য দর বেঁধে দিচ্ছে চক্রের সঙ্গে জড়িতরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিলকিরহাটের এক বাসিন্দা বলেন, “আমার পরিবারে এক ছেলে ও মেয়ের রেশন কার্ড নেই। ভিড় ঠেলে তা করতে গেলে অনেকটা সময় লাগবে। তাই এক হাজার টাকার বিনিময়ে দালালকে দিয়েছি।” চান্দামারির এক বাসিন্দা বলেন, “এপিএল কার্ড ৫০০ টাকা এবং বিপিএল কার্ড করার জন্যে এক হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।”
একই অবস্থা ভোটার কার্ড সংশোধনীর ক্ষেত্রে। অনেক জায়গাতেই একটি করে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নিয়ে অনেকেই ভোটার কার্ড যাচাইয়ের কাজ করে দিচ্ছেন। অভিযোগ, বেশ কিছু জায়গায় কার্ড প্রতি পঞ্চাশ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। ধলুয়াবাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, “আমি শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাই। অনলাইন ভাল করে বুঝি না। আর বিডিও বা এসডিও অফিসে যা ভিড় হচ্ছে তাতে পুজোর আগে সময় নষ্ট হবে। তাই টাকার বিনিময়েই ভোটার কার্ড যাচাই করেছি।” কোচবিহারে অনলাইনে কাজ করা একটি ক্যাফের মালিক অবশ্য বলেন, “অনেকেই আমাদের এখানে এসে বসে নিজেরাই কাজ করছেন। আমরা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই পয়সা নিচ্ছি।”