গচ্ছিত টাকা ফেরতের দাবিতে বুধবার জলপাইগুড়ি শহরে বড় পোস্ট অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন গ্রাহকেরা। —ফাইল চিত্র।
গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা না দিয়ে তছরুপের অভিযোগ উঠল এক পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে। জলপাইগুড়ি রাজগঞ্জ ব্লকের মান্তাদাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মেনঘোড়া পোস্ট অফিসের ঘটনা। বুধবার গ্রাহকেরা এক জোট হয়ে বড় পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হলেন। এ দিকে, প্রায় দু'মাস আগে, অভিযুক্ত ওই পোস্ট মাস্টারের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, টাকার বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। এই পরিস্থিতিতে এ দিন অভিযোগ পেয়ে, গ্রাহকদের সমস্যা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয় পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষের তরফে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রায় আট বছর আগে, মেনঘোড়া পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টারের দায়িত্বে আসেন নূর ইসলাম। অভিযোগ, ছোট পোস্ট অফিস হওয়ায় সেখানে কম্পিউটার ছিল না। তাই গ্রাহকদের পাসবই নিয়মিত ‘আপডেট’ করা হত না। গ্রাহকেরা নিয়মিত পোস্ট অফিসে টাকা জমা করতেন। কিন্তু পাসবই থাকত পোস্ট মাস্টারের কাছে, এমনই দাবি করেছেন গ্রাহকেরা। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, পোস্টমাস্টার গ্রাহকদের থেকে টাকা নেওয়ার পর সে টাকা নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা করতেন না। কম্পিউটার না থাকার ‘অজুহাত’ দেখিয়ে পাসবই আমবাড়ি পোস্ট অফিস থেকে ‘আপডেট’ করার নাম করে নিজের কাছে রেখে দিতেন। গ্রাহকদের টাকা জমা নেওয়ার পরে সাদা কাগজে লিখে দিতেন। গ্রাহকেরা বার বার পাসবই চেয়েও পাননি বলে অভিযোগ। জমা টাকা সংক্রান্ত কোনও প্রামাণ্য কাগজপত্র না থাকায় পুলিশেও তাঁরা অভিযোগ করতে পারছেন না বলে জানালেন গ্রাহকদের একাংশ।
দু’মাস আগে পোস্ট মাস্টার নূরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এর পরেই গ্রাহকেরা খোঁজ করে জানতে পারেন, তাঁদের অ্যাকাউন্টে দীর্ঘদিন থেকে টাকা জমা করা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, গ্রাহকদের একাংশের অ্যাকাউন্টের টাকাও তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে। গ্রাহকদের অভিযোগ, অভিযুক্ত মারা যাওয়ার পরে এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় জমা টাকা ফেরত পাবেন কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন ওই গ্রাহকেরা।
এক গ্রাহক অঞ্জলি ওরাওঁয়ের দাবি, ‘‘আমার অ্যাকাউন্টে এক লক্ষ আশি হাজার টাকা ছিল। পাসবই পোস্টমাস্টার নিজের কাছে আটকে রেখেছিলেন। আমবাড়ি পোস্ট অফিসে আমার অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে দেখতে পাই, গত বছর অক্টোবর ও এ বছর মে মাসে দু'বার টাকা তোলা হয়েছে। অথচ, আমি জানতাম না। এখন চার হাজার টাকা আছে অ্যাকাউন্টে।’’ অন্য এক গ্রাহক বিজয়া রায় সরকারের দাবি, ‘‘পাঁচ বছর থেকে টাকা রয়েছে। পাসবই পোস্টমাস্টারের কাছে ছিল। এখন জানতে পারলাম, আমার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়নি। পোস্ট অফিস থেকে আটটি পাসবই পাওয়া গেলেও শতাধিকের বেশি পাসবই নেই। কোথায় পাসবই? আমরা ধোঁয়াশায় আছি। পোস্টমাস্টার মারা যাওয়া পরে আমরা ওঁর বাড়িতেও গিয়েছিলাম। পরিবার থেকে জানানো হয়, সব পাসবই নাকি পোস্ট অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পোস্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সেখানেও নেই। আমাদের সন্দেহ, পুড়িয়ে কিংবা নষ্ট করে দেওয়া হতে পারে পাসবই।’’ সে ক্ষেত্রে জমা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে প্রবল আশঙ্কায় বিজয়া-সহ বাকি গ্রাহকেরা।
বড় পোস্ট অফিসের সহকারী সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট নীলাদ্রি বসাক বলেন, ‘‘গ্রাহকেরা এসেছিলেন। অভিযোগ পেয়েছি। গ্রাহকেরা টাকা তুলতে পারছেন না। তদন্তের পরেই পরিষ্কার জানা যাবে, পাসবই কোথায় আছে। তবে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাবে না।’’
নূরের বাবা, এলাকায় তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত আব্বাস আলি বলেন, "পোস্ট অফিসের গ্রাহকেরা এসেছিলেন বাড়িতে পাসবইয়ের জন্য। বাড়িতে কিছুই নেই। ছেলের ব্যাগে যত কাগজ ছিল, পোস্ট অফিসে জমা করেছি। কার কাছ থেকে, কত টাকা নিয়েছিল পরিবারের কেউই জানেন না। কারণ, ছেলে জানায়নি। হঠাৎ করে দুর্ঘটনা ঘটে গেল!"