উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। —ফাইল চিত্র।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন জারি রাখার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের বৈঠকের পরে জানানো হয়েছে, কলেজগুলিতে সমস্ত অসন্তোষ, অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষেরা। তদন্ত রিপোর্ট এবং সেই সংক্রান্ত সুপারিশ স্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে মুখ্যসচিবকে পাঠাতে হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য। প্রশ্ন উঠেছে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে, তা কে দেখবে! তা নিয়ে কার্যত ‘ধোঁয়াশা’ রয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। কারণ, সেখানে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ‘হুমকি-প্রথাকে’ প্রশ্রয় দেওয়ার। পরীক্ষা ব্যবস্থায় অনিয়মেও অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহার মদত রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। অথচ, তাঁকে মাথায় রেখেই সব তদন্ত হচ্ছে। অধ্যক্ষ আগে জানিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা তা দেখবেন। বৃহস্পতিবার তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজ করলে উত্তর মেলেনি।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি’ (পিজিটি) কৌস্তভ চক্রবর্তী এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার পরেও কোনও সমাধান-সূত্র বেরোয়নি বলে দাবি আন্দোলনকারীদের। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট’ চিকিৎসক উৎস আইচের কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। সমস্ত অভিযোগ অধ্যক্ষ খতিয়ে দেখবেন, বলা হচ্ছে। অথচ, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেই যদি অভিযোগ থাকে সে ক্ষেত্রে কী করা হবে? কেননা ইতিমধ্যেই সেই বিষয়টি একাধিক ক্ষেত্রে সামনে এসেছে।’’
‘হুমকি-প্রথা’ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে গত ৪ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহার দফতর ঘেরাও করে আন্দোলনে নামেন ডাক্তারি পড়ুয়া এবং ‘পিজিটি’রা। পরীক্ষায় নম্বর বাড়ানোর মতো অনিয়ম নিয়ে সেখানে তৎকালীন ডিন সন্দীপ সেনগুপ্তকে ঘেরাও করা হয়। চিকিৎসকদের একাংশ নম্বর বাড়ানো নিয়ে অধ্যক্ষের মদত রয়েছে অভিযোগে সরব হন। এর পরে অধ্যক্ষের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গড়ে, কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অথচ, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কিছুই করা হয়নি বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আর জি কর-কাণ্ড ও ‘হুমকি-প্রথা’র বিরুদ্ধে আয়োজিত কনভেনশনে রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষায় ‘প্রভাবশালী’ চিকিৎসক গোষ্ঠী ‘উত্তরবঙ্গ লবি’-কে মদত দেওয়ার অভিযোগে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন অনেক চিকিৎসক। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের অধিকাংশ বিভাগের প্রধানদের সই সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে পাঠানো হয় অধ্যক্ষকে অপসারণে দাবিতে।
সার্জারি বিভাগের প্রধান পার্থসারথি সরকার বলেন, ‘‘মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করে আমরা বলে এসেছি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে কোনও কমিটি হয়নি। তা দেখা হোক। কিছুই এখনও হল না।’’