আহত: মহম্মদ সলেমান। নিজস্ব চিত্র।
অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় সোমবার সন্ধেয় গুলিবিদ্ধ তৃণমূল নেতা মহম্মদ সলেমানকে স্থানান্তরিত করা হল উত্তরবঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে তাঁর চিকিৎসা চলছিল রবিবার রাত থেকে। ওইদিন সন্ধেয় শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ভুটকি এলাকায় একটি চায়ের দোকানের সামনে দু’জন দুষ্কতী তাঁকে সামনে থেকে গুলি করে। তাঁর মাথায় গুলি লাগে। এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গভীর সঙ্কটে ওই নেতা।
এ দিকে, ঘটনার জেরে এ দিন ওই এলাকা একেবারে থমথমে। এ দিন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার গৌরব শর্মা এবং অন্য পুলিশ আধিকারিকেরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় দোকানপাট পুলিশ বন্ধ করে দেয়। কাছেই বলরাম এলাকায় সলেমানের বাড়িতেও যান তাঁরা। পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। ভুটকির গন্ডার মোড় এলাকায় শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ৩১ডি জাতীয় সড়কের ধারে বাজারে লটারির দোকানে টিকিট কাটতে গিয়েছিলেন সলেমান। এদিন একটি বিয়েবাড়িতেও যাওয়ার কথা ছিল। বাড়িতে বলে যান, উপহার কিনে আসছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধে সওয়া ৭টা নাগাদ লটারির দোকানে বসেছিলেন সলেমান। হঠাৎ অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবক লাল রঙের একটি বাইকে করে এসে সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল থেকে গুলি করে।
কারা কেন গুলি করল তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। এলাকার ব্যবসায়ী চা দোকানি দুলাল মণ্ডল, মিষ্টির ব্যবসায়ী কনক দেব-রাও ঘটনায় উদ্বিগ্ন। ঘটনার পিছনে জমির কারবার নিয়ে গোলমালের জের রয়েছে বলে অনেকের অনুমান। কেন না সলেমান জমি কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত। প্রায়শই মোটা টাকার লটারির টিকিট কেনেন। জমির কারবার থেকেই টাকা আসে বলে অনেকের অনুমান। সলেমানের ভাই মহম্মদ ওসমান জানান, দাদা জমির কারবার করে। তাঁর মোবাইল ফোনটি পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। পুলিশ খতিয়ে দেখুক। জলপাইগুড়ি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ চন্দ ঢালি বলেন, ‘‘প্রাথমিক অনুমান জমি নিয়ে সমস্যার কারণে গুলি চালানোর ঘটনা হতে পারে। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। দুষ্কৃতীদের খোঁজ চলছে।’’
দৃষ্কৃতীদের গুলি সলেমানের মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। সলেমান সেখানেই লুটিয়ে পড়েন। পাশে থাকা লটারি বিক্রেতাও গুলিতে জখম হয়েছিলেন। চিকিৎসার পর এ দিন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই লটারি বিক্রেতা পাপন প্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘আমার থেকে টিকিট কেটে বেঞ্চে পাশে বসেছিলেন। বাকি টিকিট ফেরত দিতে জমা করতে হবে বলে তাড়াহুড়ো করছিলাম। এর মধ্যেই আমি ছিটকে পড়ি। উঠে দাঁড়িয়ে দেখি টিকিটগুলো পড়ে গিয়েছে, সলেমানদা পড়ে রয়েছে। আমারও রক্ত পড়ছে দেখে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য চিৎকার করতে থাকি। আর কিছু খেয়াল নেই।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, দুষ্কৃতীরা মাস্ক পরেছিল। একজন কালো শীতের পোশাক পরেছিল। স্থানীয় এক যুবক দুষ্কৃতীদের পিছু নিয়েছিল বলে দাবি, কিন্তু চলন্ত বাইক থামিয়ে দুষ্কৃতীরা ফের পিছু নেওয়া বাইক চালককে লক্ষ্য করে গুলি করে, চম্পট দেয়। গাড়ির নম্বর প্লেট কাদা বা গোবর দিয়ে ঢেকে রাখা ছিল। পরিকল্পনা করেই এই কাজ বলেও পুলিশের একাংশের ধারণা।