রাতে হস্টেলের ঘরে ঢুকে মারধর, কথা না-শুনলে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তা দেখে অপর এক ছাত্র হস্টেলের সুপারকে ফোনে জানালে তিনি অভিযুক্তদের মোবাইলে ফোন করে বোঝাতে চেষ্টা করেন। না শুনলে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ আসছে শুনে অভিযুক্তরা চলে যায়। রবিবার রাতে উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজের হস্টেলে ওই ঘটনায় প্রথম বর্ষের এক ছাত্র র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেছেন। বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের আট ছাত্রের নাম করে অভিযোগ জানান ছাত্রটি। তাঁর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁতে। বাঁ কানে চড় মারায় ছাত্রটির কানে শুনতে অসুবিধা হচ্ছে। ব্যথাও হচ্ছিল। মেডিক্যালেই চিকিৎসা করান তিনি। অভিযোগ জানানোর পরে তার উপর ফের হামলা হতে পারে এই আশঙ্কায় ওই ছাত্র হস্টেলের বাইরে রয়েছেন।
অভিযোগ, কলেজে ভর্তির পর থেকেই ওই ছাত্রকে রাতে ডেকে নিয়ে গিয়ে অশালীন আচরণ করানো, গালিগালাজ দিতে বলা, খারাপ অঙ্গভঙ্গি করতে বলা-সহ নানা ভাবে র্যাগিং চালানো হচ্ছিল। রাত ১২ টা থেকে ভোর পর্যন্ত চলত র্যাগিং। গায়ে হাত তোলায়, মারধর করা, প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখানোয় সহ্যের বাঁধ ভেঙেছে। ছাত্রটির কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে পুলিশকে জানানো হয়েছে। অধ্যক্ষ সৌমেন চক্রবর্তী কলেজের কাজে কলকাতায় রয়েছেন। তিনি ফিরলে কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানানো হয়।
সৌমেনবাবু সম্প্রতি অধ্যক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। তবে তা গ্রহণ করা হয়নি। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাদল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘পুলিশকে জানানো হয়েছে। অভিযোগকারীকে হস্টেলে ফেরাতে চেষ্টা চলছে।’’ অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটির তরফেও বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। সৌমেনবাবু জানান, তিনি অভিযোগ শুনেছেন। ফিরে গিয়ে দেখবেন।
অভিযোগকারী জানিয়েছেন, ওই রাতে দেড়টা নাগাদ তাঁকে কলেজের এক সিনিয়র দাদা ঘরে ডাকেন। তিনি সেখানে যেতে চাননি। কিছুক্ষণ পরে তাঁর ঘরে কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে চড়াও হয় ওই সিনিয়র ছাত্রটি। প্রথম বর্ষেক ছাত্রটিকে কানে চড়, পেটে লাথি, কিল ঘুষি মারা হয়। কথা না শুনলে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। এই ঘটনা দেখে শুভাকাঙ্ক্ষী এক ছাত্র হস্টেল সুপারকে ফোন করে জানায়। তিনি বাইরে থাকায় পুলিশকে খবর দেন। টিএমসিপি নিয়ন্ত্রিত কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ বেরা জানান, ‘‘পরীক্ষার জন্য ব্যস্ত। এমন ঘটনা জানা নেই।’’
ডেন্টাল কলেজে এর আগে একাধিকবার ছাত্রছাত্রীদের উপর র্যাগিয়ের অভিযোগ উঠেছে। তার পরেও কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে কী ভাবে র্যাগিং চলছে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এই বিষয়ে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি, হস্টেল সুপারদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।