কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে পুজো মুখ্যমন্ত্রীর। — নিজস্ব চিত্র।
কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেলা ১২টা বাজার খানিক ক্ষণ আগেই কোচবিহার সার্কিট হাউস থেকে মদনমোহন মন্দিরের দিকে রওনা দেয় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি কী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে একটি মহলের দাবি, মমতা রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ অনন্ত মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। সে জন্য অনন্তের বাড়ির সামনে সাজ সাজ রব।
লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করেছিলেন এই কোচবিহার থেকেই। ফলপ্রকাশের পর জানা যায়, তৃণমূল বিজেপির কাছ থেকে কোচবিহার আসনটি পুনর্দখল করতে সক্ষম হয়েছে। সেই জয়ের পর এই প্রথম জেলায় এলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন মদনমোহন মন্দিরে। সেখানে পুজো দেন তিনি। এর পর কোচবিহার থেকে রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ অনন্তের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন মমতা। সে জন্য অনন্তের বাড়ির সামনে নিরাপত্তার কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অনন্ত বলেন, ‘‘আমি জানি না ম্যাডাম কেন আসছেন। সকালে এসপি আমায় ফোন করে জানালেন। প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী আসছেন আমাদের বাড়িতে, খুব ভাল লাগছে। আগে যদি জানতাম, তা হলে অন্য রকম ব্যবস্থা করতে পারতাম। কিন্তু সকালে শুনলাম ম্যাডাম আসবেন।’’
সকালে যখন মুখ্যমন্ত্রী মদনমোহন মন্দিরে প্রবেশ করেন, তখন তাঁর পিছনে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, উদয়ন গুহ, কোচবিহারের প্রবীণ তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। আগাগোড়া মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন কোচবিহার লোকসভায় নিশীথ প্রামাণিককে হারানো জগদীশ রায় বাসুনিয়াও।
কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রটিকে পাখির চোখ করে ঝাঁপিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু শুরু থেকেই লড়াই ছিল অত্যন্ত কঠিন। কোচবিহার লোকসভার নির্ণায়ক রাজবংশী ভোটের একটি অংশ তৃণমূলের সঙ্গে থাকলেও অপর গোষ্ঠীর নেতা অনন্ত মহারাজ ছিলেন খোলাখুলি ভাবে বিজেপির সঙ্গে। তাঁকে সাংসদ করে রাজ্যসভায়ও পাঠায় বিজেপি। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে অনন্তের সম্পর্ক সবসময় মসৃণ গতিতে এগোয়নি। বিভিন্ন কারণে দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের উপর ‘গোসা’ হয় অনন্তের। কোচবিহারের অভ্যন্তরীন রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, এই ‘গোসা’রই ফায়দা গিয়েছে তৃণমূলের ভোটবাক্সে। আরও বিভিন্ন সমীকরণও তৃণমূলের পক্ষে যায়। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে কোচবিহার আসনটি দখল করে তৃণমূল। ভোটের ফলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, তৃণমূলের পক্ষে থাকা বংশীবদন বর্মণের হাতে থাকা রাজবংশী ভোট তৃণমূলে গিয়েছে তো বটেই, এমন কি অনন্তের তরফের ভোটেও থাবা বসিয়েছে তৃণমূল। এই প্রেক্ষিতে এ বার অনন্তের বাড়িতে পৌঁছে গেলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।