ইঞ্জিন চালিয়ে রেললাইন পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে সোমবার দুপুর থেকেই দুর্ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করেছিলেন রেলকর্মীরা। সন্ধ্যার পর আপ লাইন ধরে ইঞ্জিন চালিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখা হয়। রেলের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছিল, আপ লাইন স্বাভাবিক করে তোলা হয়েছে। তবে সোমবার কোনও যাত্রিবাহী কিংবা মালবাহী গাড়ি ওই লাইনে চলেনি। মঙ্গলবার সকালে আপ লাইন ধরে খুব ধীর গতিতে কামাখ্যা গান্ধীধাম এক্সপ্রেসকে পার করানো হয়। সোমবারের পর এই প্রথম কোনও যাত্রিবাহী ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পেরোল।
মঙ্গলবার দুর্ঘটনাস্থলে ছিলেন রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার। তিনি জানান, আগামী দু’-তিন ঘণ্টার মধ্যে ডাউন লাইনেও ট্রেন চলাচল শুরু হবে। খুব শীঘ্রই আপ এবং ডাইন— দুই লাইনেই ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে জানান তিনি। এই প্রসঙ্গে রেলের এই শীর্ষকর্তা বলেন, “গত কালের দুর্ঘটনার পর রেলকর্মীরা কাজে নামেন। লাগাতার প্রচেষ্টায় তাঁরা কাল সন্ধ্যায় আপ লাইনকে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে তোলেন। ডিজ়েল ইঞ্জিন চলাচল করে। অন্য দিকে ডাউন লাইনে বৈদ্যুতিন তার লাগিয়ে রেল চলাচলের কাজ শুরু হবে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেটাও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আপ এবং ডাউন লাইন দুটোই সম্পূর্ণ ভাবে স্বাভবিক করার কাজ চলছে৷”
অন্য দিকে কী কারণে এই দুর্ঘটনা, তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সিগন্যাল বিভ্রাটই কি দায়ী দুর্ঘটনার জন্য? এই প্রশ্নে ডিআরএম বলেন, “কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটির আধিকারিকেরা ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থসলে এসে পৌঁছেছেন। তাঁরা প্রথমিক ভাবে কাজও শুরু করেছেন। তাঁরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলবেন। বয়ানও নথিবদ্ধ করা হবে।” একই সঙ্গে তিনি দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণ হিসাবে একাধিক ‘অসঙ্গতি’র কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ অনুসন্ধান করা হবে। তবে প্রাথমিক ভাবে অনেক অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। ‘সিগন্যাল ফেলিওর’, ‘কর্মীদের অসাবধানতা’-সহ কিছু কিছু বিষয় নজরে আসছে ৷ তবে এ বিষয় নিয়ে শেষ রায় কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটি দেবে।”
সোমবার সকাল ৫টা ৫৫ মিনিট নাগাদ ত্রিপুরার আগরতলা থেকে ছাড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে নির্ধারিত সময়েই রওনা দিয়েছিল ট্রেনটি। তার পরই ঘটে বিপত্তি। নীচবাড়ি এবং রাঙাপানি স্টেশনের মাঝে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। যে লাইন দিয়ে এক্সপ্রেস চলছিল, সে লাইনেই পিছন থেকে এসে সজোরে ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে। ধাক্কার জেরে এক্সপ্রেসের একাধিক কামরা উঠে পড়ে মালগাড়ির ইঞ্জিনের উপর। লাইনচ্যুত হয় মালগাড়ির কামরাও। এই দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৪১ জনের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা গুরুতর।