টুইটার থেকে নেওয়া।
আলিপুরদুয়ার সফর শেষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ দিনে গণবিবাহের আসরে ধামসা-মাদলের তালে আদিবাসী নাচের ছন্দে মেতে উঠতে দেখা গেল তাঁকে। তার পরে সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের অনুষ্ঠানেও অন্য মেজাজে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে। নিজের বক্তৃতার একেবারে শেষে বললেন, ‘‘আপনারা ভাল থাকলে, আমিও ভাল। আপনারা খারাপ থাকলে আমি কোথায় যাব?’’ পাশাপাশি তীব্র আক্রমণ করলেন বিজেপিকে।
কখনও ব্যাডমিন্টন, কখনও আবার ধামসা-মাদলের তালে আদিবাসী নৃত্য— মমতার উত্তরবঙ্গ সফর মানেই একটু অন্য রকম। এ বারের আলিপুরদুয়ার সফরেও তার ব্যতিক্রম হল না। বুধবার সকালে হাসিমারা সুভাষিণী চা বাগানের মাঠে মুখ্যমন্ত্রী যোগ দেন একটি গণবিবাহের অনুষ্ঠানে। সেখানেই ধামসা-মাদলের তালে তালে আদিবাসী নৃত্যে মেতে উঠতে দেখা গেল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। নবদম্পতিদের আশীর্বাদ করেন মমতা। রাজ্য সরকারের তরফে প্রত্যেক দম্পতিকে রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকেও বিঁধতে ছাড়েননি মমতা। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘সব কিছুর দাম এত বেড়ে গিয়েছে যে, বেঁচে থাকাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। উজালা গ্যাস দিয়েছিল কেন্দ্র, এখন কী করছেন সেই গ্যাসে?’’ তার পরেই সরাসরি বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলে বলেন, ‘‘ভোট এলেই বলবে, সেপারেট স্টেট দেব। আর ভোট মিটতেই দেশের অবস্থা দেখুন, জিনিসপত্রের দাম কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে।’’ কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলেও মঞ্চ থেকে অভিযোগ জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা দাবি করেন, দুয়ারে রেশন থেকে শুরু করে লক্ষীর ভান্ডার, চা সুন্দরী— রাজ্য সরকার সমস্ত রকম জনকল্যাণমূলক প্রকল্প নিয়ে প্রান্তিক ও গরিব মানুষের পাশে আছে। চা শ্রমিকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ‘‘আগে আপনারা মজুরি পেতেন মাত্র ৬৭ টাকা। আমরা সেটা বাড়িয়ে করেছি ২০২ টাকা। আরও বাড়বে। কিন্তু যত দিন না বাড়ছে, তত দিন ১৫ শতাংশ হারে ইন্টেরিম রিলিফ পাবেন।’’
আদিবাসীদের জন্য রাজ্য জুড়ে তাঁর সরকার কী কী করেছে, তার খতিয়ান দেওয়ার পাশাপাশি মমতা ঘোষণা করেন, আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া আইনত নিষিদ্ধ করেছে তাঁর সরকার। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনারা ভাল থাকলে আমিও ভাল। আপনারা খারাপ থাকলে আমি কোথায় যাব?’’
গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলকে খালি হাতে ফিরিয়েছে আলিপুরদুয়ার। একুশের নীলবাড়ির লড়াইতেও রাজ্যের অন্যান্য জায়গার তুলনায় এই অঞ্চলে তৃণমূলের ফল কহতব্য কিছুই নয়। সেই প্রেক্ষিতে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া সফর সেরে মুখ্যমন্ত্রীর আলিপুরদুয়ার যাওয়াকে রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, জঙ্গলমহলের দুই জেলাতেও তৃণমূলের নির্বাচনী ফল খুব একটা ভাল হয়নি। পুরুলিয়াতেও মমতা প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে বলেছিলেন ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেওয়ার কথা। এ বার উত্তরের আলিপুরদুয়ারের সভা থেকেও কার্যত একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। বছর ঘুরলেই প়ঞ্চায়েত ভোট। সেই প্রেক্ষাপটে মমতার এই মন্তব্যকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।