প্রতীকী ছবি।
বিছানার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে বই, খাতা। দেওয়ালে হেলান দিয়ে রাখা সাদা রঙের বোর্ড। তার ঠিক নীচেই রাখা একটা হেডফোন।
বোর্ডে একটা অঙ্ক কষে রাখা। এবং তার ঠিক নীচেই ইংরেজি হরফে লেখা— ‘মা আই কুইট’। সেই লেখার নীচে একটা ‘স্মাইলি’ আঁকা। সময় লেখা দুপুর আড়াইটে। ঠিক এ ভাবেই ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সোমনাথ সাহার দেহ।
শিলিগুড়ির জ্যোতিনগরের বাসিন্দা সোমনাথ। শিলিগুড়ি বয়েজ স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল সে। মেধাবী ছাত্র। অঙ্ক পাগল। পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব সূত্রে জানা গিয়েছে, সব সময় অঙ্ক এবং পড়াশোনা নিয়েই বুঁদ থাকত সে। সোমনাথের ইচ্ছা ছিল, পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়ে অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে এগনোর। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরেই এক লহমায় সব বদলে যায় সাহা পরিবারে।
সোমনাথের বাবা সুবীর সাহা জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে আর পাঁচটা দিনের মতো খুব স্বাভাবিক ছিল তাঁর ছেলে। কোনও রকম অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি সোমনাথের মধ্যে। দুপুরে এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে নিজের ঘরে চলে যায় সে। পড়াশোনা করছিল। বিকেল নাগাদ সোমনাথের ঠাকুরমা নাতির ঘরে ঢুকতেই দেখেন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে সে। চিৎকার চোঁচামেচিতে সোমনাথের বাবা-মা ছুটে আসেন। কিন্তু তত ক্ষণে সব শেষ।
আত্মহত্যা করার আগে একটা অঙ্কও কষে গিয়েছিল সোমনাথ। তার ঘরে বিছানার উপর রাখা সাদা রঙের বোর্ডটা সেই কথাই বলছে। সেই অঙ্কের নীচেই মাকে উদ্দেশ করে লেখা— ‘মা আই কুইট।’ একটা স্মাইলি এবং সময়। কিন্তু যে ছেলেটা সকলের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করল, কোনও অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি, হঠাৎ এমন চরম পথ বেছে নিল কেন? ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে এখানেই। সেই সঙ্গে কয়েকটা প্রশ্নও উঠে আসছে।
তার বন্ধুদের অনেকেই জানিয়েছেন, অঙ্ক সোমনাথের খুব প্রিয় ছিল। কোনও অঙ্কের সমাধান করতে না পারলে বেশ বিরক্তই হত সে। সম্প্রতি সমস্ত প্রাইভেট টিউটর ছাড়িয়ে দেওয়ারও কথা নাকি শোনা গিয়েছিল তার মুখে। তা হলে কি কোনও রকম মানসিক অবসাদে ভুগছিল সোমনাথ? তার জেরেই কি এই চরম পথ বেছে নিল সে? বোর্ডে কষা অঙ্কের সমাধান করে গিয়েছে সে। তা হলে কি জীবনের অঙ্ক কোনও ভাবে মেলাতে পারছিল না সে? এ সবেরই প্রশ্ন খুঁজছে সোমনাথের পরিবার এবং পুলিশ।