প্রতীকী ছবি।
দ্বন্দ্বটা ছিলই। বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই কোচবিহারে নব্য ও আদি বা পুরনো বিজেপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে লড়াইটা চলছিল। তার মধ্যেই শুক্রবার মুকুল রায়ের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন ঘটল। এই অবস্থায় নব্যদের গুরুত্ব দিলে দলের কী হাল হবে, তা তুলে ধরে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছেন দলের পুরনো নেতা-কর্মীরা। দলীয় সূত্রে খবর, দিন কয়েক আগেই বিজেপি ছাড়ার কথা জানিয়েছেন আরও-এক তৃণমূলত্যাগী ভুষণ সিংহ। একসময় কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। ভোটের মুখে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন নিশীথ প্রামাণিক। পরে তিনি বিজেপির টিকিটে কোচবিহারের সাংসদ নির্বাচিত হন। নাটাবাড়ি কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামীও ভোটের মুখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তিনিও বিধায়ক হয়েছেন। এঁরা সবাই কি তবে এখন সন্দেহের পাত্র? জেলা জুড়ে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিজেপির কোচবিহার জেলার সভানেত্রী মালতী রাভা অবশ্য দাবি করেন, মুকুল রায়ের দলবদলের কোনও প্রভাব দলে পড়বে না। দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই বলেও দাবি করেন তিনি। বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, “বিজেপি ধীরে ধীরে শক্তি বাড়াচ্ছে। দলে নব্য ও পুরনোর কোনও বিষয় নেই। যাঁরা বিজেপি করেন, তাঁরা বিজেপির সঙ্গেই রয়েছেন।” নিশীথ প্রামণিকের সঙ্গে অবশ্য কোনও যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল একাধিকবার বাজলেও তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপেও প্রশ্ন করে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে বিজেপি বিধায়ক মিহির বলেন, “আমি দলের কর্মী। দলের নির্দেশ মেনেই চলি। বিজেপিতেই আছি। বিজেপিতেই থাকব।” নেতারা দ্বন্দ্বের অভিযোগ এড়িয়ে গেলেও ফেসবুকে অবশ্য তা গোপন রাখেননি কর্মীরা। বিজেপির নব্য-আদি দ্বন্দ্ব গত কিছুদিন ধরেই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধায়ক মিহির গোস্বামী তাঁর নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী নেননি। যদিও দলের কোচবিহার জেলা সভানেত্রী ও বিধায়ক মালতী রাভা-সহ অপর বিধায়করা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়েছেন। তা নিয়ে দু’পক্ষের মতামতেই বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। মিহির জানিয়েছিলেন, যেখানে নিচুতলার কর্মীদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে, সেখানে তিনি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে কী করবেন? সভানেত্রী মালতী জানিয়েছিলেন, নিচুতলার কর্মীদের পাশে দাঁড়াতেই তাঁদের গ্রামে গ্রামে ঘুরতে হবে, তাই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার প্রয়োজন আছেন।
একই ভাবে দিন কয়েক আগে সাংসদ নিশীথ অধিকারী কোভিড রোগীদের সহায়তার কথা জানিয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স উদ্বোধন করেন। অভিযোগ ওঠে, ওই অ্যাম্বুলেন্সের বৈধ কোনও কাগজপত্র নেই। বিজেপির জেলা নেতাদের অনেকেই জানিয়েছিলেন, ওই অ্যাম্বুল্যান্সের বিষয়ে তাঁদের কিছু জানা নেই। এমনকী, সাংসদের দিল্লি যাওয়া নিয়েও দলের জেলা নেতাদের কাছে কোনও তথ্য সবসময় থাকে না বলে জানানো হয়। নিশীথ, মিহির— তৃণমূল ছেড়ে আসা নেতাদের সঙ্গে দলের পুরনো নেতাদের মতভেদের এমন নানা ঘটনা সামনে এসেছে। যার প্রভাব পড়েছে দলের তৃণমূলস্তরের আদি-নব্য কর্মীদের মধ্যেও। মুকুল ঘরে ফেরার পর তাঁদের প্রতি সন্দেহ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদিকা দীপা চক্রবর্তী বলেন, “কোচবিহার তথা গোটা উত্তরবঙ্গেই দলে কোনও বিরোধ নেই।”