শহর বাড়লেও পরিষেবা বাড়েনি দিনহাটায়

শহরের আয়তন বেড়েছে। আরও হয়তো বাড়বে। কিন্তু, পুর-পরিষেবা কিছুই যেন বাড়ে না। দিনহাটা শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই তাই পুর পরিষেবা নিয়েও পরিকল্পনাহীনতার অভিযোগ তুলেছেন। পানীয় জলের সমস্যায় ভোগান্তির অভিযোগকে কেন্দ্র করে ওই অভিযোগ তীব্র হয়েছে। ফি বছরের মত এ বারেও গরমের মরসুমের শুরু হতেই দিনহাটা পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা চরম আকার নিয়েছে।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

দিনহাটা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৬
Share:

নিকাশি বেহাল হয়ে পড়েছে দিনহাটা শহরের অনেক জায়গাতেই। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

শহরের আয়তন বেড়েছে। আরও হয়তো বাড়বে। কিন্তু, পুর-পরিষেবা কিছুই যেন বাড়ে না। দিনহাটা শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই তাই পুর পরিষেবা নিয়েও পরিকল্পনাহীনতার অভিযোগ তুলেছেন। পানীয় জলের সমস্যায় ভোগান্তির অভিযোগকে কেন্দ্র করে ওই অভিযোগ তীব্র হয়েছে। ফি বছরের মত এ বারেও গরমের মরসুমের শুরু হতেই দিনহাটা পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা চরম আকার নিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে পাম্প হাউস বিকল হয়ে পড়ায় পরিস্থিতি আরও মারাত্মক হয়ে উঠছে। ফলে, বাসিন্দাদের অনেকে পানীয় জল কিনতে বাধ্য হন। এ ছাড়াও শহরে প্রায় বছর ভর রাস্তার স্ট্যান্ডপোস্টে জলের চাপ কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে। বহু বাড়িতে সংযোগ থাকলেও জল ঠিকমতো পড়ছে না।

Advertisement

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, দিনহাটা পুর এলাকার ১৫ টি ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের জন্য ৬ টি পাম্প হাউস রয়েছে। গোধূলি বাজার, ফুলদিঘি, পিএইচই অফিস, মহরম মাঠ ও এসডিও বাংলো ও গোপাল নগর লাগোয়া এলাকার ওই পাম্প হাউসগুলি রয়েছে। গোধূলিবাজার ও মহরম মাঠ এলাকার পাম্প হাউস দুটির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ফুলদিঘি এলাকার পাম্প হাউসটির প্রায় এক অবস্থা। মাঝেমধ্যে সেগুলি বিকল হয়ে পড়ার নজির রয়েছে। তার ওপর প্রায় ১০ কিমি এলাকা জুড়ে পাইপ লাইন বসানো হয়নি।

নতুন শহরের গোপালনগর, ঝুড়িপাড়া গোসানি রোড, স্টেশন পাড়া থেকে বাবুপাড়া, থানা পাড়া সবর্ত্র এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে। নতুন করে বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগের আবেদন নেওয়া পুরসভা স্থগিত রাখায় বাসিন্দাদের ওই ক্ষোভ আরও বেড়ে গিয়েছে। দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান চন্দন ঘোষ অবশ্য বলেন, “গত কয়েকমাস ধরে লো ভোল্টেজের সমস্যায় পানীয় জলের পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকী এ জন্য বাড়ির সংযোগের আবেদন জমা নেওয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে আমরা বসে নেই। পুরসভার সামনে নতুন দু’টি পাম্প হাউসের কাজ চলছে। অন্য ক্ষেত্রেও ভাল পরিষেবা দিতে কাজ হচ্ছে।”

Advertisement

বিরোধীরা অবশ্য তাতে আশ্বস্ত নন। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের রবীন্দ্রনাথ দে বলেন, “জলকর বাবদ ফি মাসে বিপিএল তালিকাভুক্তদের থেকে ৩০ টাকা ও এপিএল বাসিন্দাদের থেকে ৫০ টাকা নেয় পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেউই ঠিকঠাক পানীয় জল পাচ্ছেন না। পুরসভা লো ভোল্টেজের কথা বলে দায় এড়াতে চাইছেন। টাউন কমিটির আমলে পরিষেবা ভাল ছিল।”

নিকাশি, রাস্তাঘাট নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বর্ষায় দিনহাটা বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে। থানাপাড়া, এক্সচেঞ্চ রোড, গোপালনগর, শিক্ষক পল্লী, বোর্ডিংপাড়া, কলেজপাড়া, ডাকবাংলো রোড সর্বত্র এক ছবি। পুরসভার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম নন্দী বলেন, “নদর্মা নিয়মিত সাফাই হচ্ছে না। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের মতো আর্বজনায় নিকাশি নালা ভরে গিয়ে সমস্যা বেড়েছে। তার পরেও পুরসভার হেলদোল নেই। এমনকী, বেহাল নিকাশির হাল ফেরাতে মাস্টার প্ল্যান তৈরিতেও পুরসভা উদাসীন।” অভিযোগ, বেশির ভাগ ওয়ার্ডে বিভিন্ন রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ১, ২, ১১, ১২, ১৩, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে সমস্যা বেশি।

দিনহাটা পুরসভার বিরুদ্ধে ওই সব পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের সঙ্গে বাসিন্দাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে একাধিক দিঘির বেহাল দশা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পানীয় জল শুধু নয়, জতুগৃহের চেহারা হয়ে রয়েছে শহরের একাধিক বাজারের। অগ্নিকান্ডের ঘটনা হলে দ্রুত জলের ব্যবস্থা করা নিয়েও তাদের দুশ্চিন্তা রয়েছে। ঘিঞ্জি চওড়াহাট বাজার ও পাট তামাকের গুদামঘর লাগোয়া রাজ আমলের শতাব্দী প্রাচীন রাজমাতা দিঘি বেহাল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় জলস্তর নেমে গিয়েছে। চারদিক ভরেছে জবরদখলে। রাজ আমলে ৩ একর জমির ওপর তৈরি ওই বিশাল দিঘি ধুঁকছে। দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহ অবশ্য বলেন, “গ্রামাঞ্চল থেকে যত মানুষ শহরে এসে থাকছেন। তাদের সবার নাম পুরসভা এলাকার ভোটার তালিকায় নেই। ফলে জনসংখ্যা ভিত্তিক গ্রেডেশন বাড়েনি। এতে বরাদ্দ কম আসছে। বাসিন্দাদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এটা এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

(শেষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement