প্রতীকী ছবি।
সতেরোটি শিশু বিক্রির তথ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল তদন্ত। তারপরে তিন বছরে ৬৩টি শিশুর হদিশ পেয়েছে সিআইডি। জলপাইগুড়ির হোম থেকে শিশু বিক্রি মামলায় এমনটাই জানানো হয়েছে আদালতে। ৬৩টি শিশুকে জলপাইগুড়ির শিশু কল্যাণ সমিতি-র (সিডব্লিউসি) সামনে পেশ করা হয়েছে। অভিযোগ, সব শিশুকেই দত্তক দেওয়ার নাম করে বিক্রি করা হয়েছিল।
হোম কর্তৃপক্ষ শিশুদের পেয়েছিল কী ভাবে? সিআইডি-র দাবি, কিছু শিশুকে কেড়ে বা চুরি করে আনা হয়েছিল, কিছু শিশু উদ্ধার হয়ে হোমে এসেছিল। কোনও মানসিকহীন ভারসাম্যহীন মায়ের থেকে শিশু কেড়ে, গরিব মায়ের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে শিশুদের অনাথালয়ে নিয়ে আসার অভিযোগও রয়েছে। সেই শিশুদেরই দত্তক দেওয়ার নাম করে মোটা টাকায় হোম কর্তৃপক্ষ বিক্রি করে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। তদন্তকারী এজেন্সির এক আধিকারিকের দাবি, ন্যূনতম ৫ লক্ষ টাকা থেকে ওই লেনদেনগুলি হয়েছে। সেই হিসেবে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল জলপাইগুড়ি শিশু চুরি তথা শিশু বিক্রি মামলায়।
মামলায় মোট সত্তর জন সাক্ষী রয়েছেন। তার মধ্যে ২০-২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে সিআইডির দাবি। এদের মধ্যে সিডব্লিউসি-র তৎকালীন সদস্যরা রয়েছেন। ১৪ অক্টোবর থেকে যাঁদের সাক্ষ্যগ্রহণ জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে শুরু হওয়ার কথা। সিআইডির এক আধিকারিকের কথায়, “বিচারাধীন মামলা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা ঠিক নয়। তবে এতটুকু বলা যেতে পারে আরও অনেক কিছু সামনে আসতে পারে।”
২০১৬ সালে মামলা শুরু। সিডব্লিউসির তরফে হোম পরিদর্শনের সময়ে হোমের খাতায় ১৭টি শিশুর তথ্যে গরমিল মেলে বলে সূত্রের খবর। সে সময় চন্দনা চক্রবর্তীর হোম দত্তক দেওয়ার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ছিল। সিডব্লিউসি-র তরফে জেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও তদন্ত ধামাচাপা পড়ে যায় বলে অভিযোগ। রাজ্যের শিশু অধিকার এবং পাচার অধিকর্তার দফতর থেকেও প্রশাসনকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে খবর। তারপরের বছর মামলা হাতে তুলে নেয় সিআইডি। হোমে তল্লাশি চালিয়ে সিআইডি অভিযোগ দায়ের করে। ১৭টি শিশুকে দত্তক দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও নিয়মই মানা হয়নি বলে অভিযোগ হয়েছিল। তারপরে হোমের নথিপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে একেক পর এক শিশুর তথ্য সামনে আসতে থাকে। চন্দনা চক্রবর্তী-সহ ৭ জন গ্রেফতার হয়। বিজেপি নেত্রী জুহি চৌধুরীকেও ধরেছিল সিআইডি। পরে তিনি জামিন পান। মামলার মূল অভিযুক্ত চন্দনা চক্রবর্তীর আইনজীবীদের দাবি, শিশু চুরি থেকে শিশু বিক্রি সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। দত্তক দেওয়ার সব আইনি নথি রয়েছে বলে দাবি আইনজীবীদের।
মানবিক কারণে ওই শিশুরা আপাতত দত্তক নেওয়া অভিভাবকদের কাছেই রয়েছে। প্রতি তিন মাস অন্তর শিশুদের সিডব্লিউসির সামনে নিয়ে আসতে হয় অভিভাবকদের। নিয়মিত ছবি এবং মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্টও পাঠাতে হয়। মামলার নিষ্পত্তি হলে এই শিশুদের ভবিষ্যত আদালতের রায়ে স্থির হবে বলে দাবি সিডব্লিউসির সদস্যদের।