ভাঙা: জলপাইগুড়ির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএমের অবস্থা। নিজস্ব চিত্র।
ছোটখাট গোলমালের খবর ছাড়া সকাল থেকে বেশ চলছিল ভোটগ্রহণ। কিন্তু তাল কাটল দুপুর থেকে। সৌজন্যের ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে এসে ছাপ্পা ভোট, বিরোধীদের মারধরের খবরে তেতে উঠল জলপাইগুড়ি শহর। প্রথম বড় গোলমালের খবর আসে ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। তার পরে তা দাবানলের মতো দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর পরে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ আসে ময়নাগুড়ির বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকেও। মালবাজার থেকে তেমন কোনও অভিযোগ আসেনি।
হঠাৎ ছবিটা এই ভাবে বদলে গেল কেন? তৃণমূলের অন্দরের দাবি, দুই শহরেরই যে সব ওয়ার্ড থেকে অশান্তির অভিযোগ এসেছে, সেগুলির বেশিরভাগেই তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে।
জলপাইগুড়িতে ১ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি ভোট কেন্দ্রের সব বুথে ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছে। এই ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী নীলম শর্মা। যিনি যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি। তৃণমূলের প্রথম তালিকায় এই ওয়ার্ডে প্রার্থী ছিলেন শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিক্ষুব্ধ হয়ে নির্দলে লড়তে চাইলে মনোনয়ন দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। শেখরের অভিযোগ ছিল সৈকতের বিরুদ্ধে।
দলের প্রার্থী পছন্দ নয় বলে জলপাইগুড়ি এবং ময়নাগুড়ির বিভিন্ন ওয়ার্ডে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ চোরাগোপ্তা প্রচার চালাচ্ছিল। সেই ওয়ার্ডগুলি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয় দলে। যেমন ৬ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে তৃণমূলের একটা বড় অংশের ভোট কংগ্রেসের বাক্সে পড়ার জল্পনা ছিল। এই অভিজাত ওয়ার্ডেও ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছে। ময়নাগুড়ি পুরসভার তিনটি ওয়ার্ড থেকে বিরোধীরা প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। জলপাইগুড়ি পুরসভার ৯টি ওয়ার্ডের নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস সরে দাঁড়িয়েছে একটি ওয়ার্ড থেকে।
জলপাইগুড়ির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ইভিএম ভাঙচুর হওয়ায় পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলা হলেও রাত পর্যন্ত প্রশাসন কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। জলপাইগুড়ি এবং ময়নাগুড়িতে ভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়-সহ নেতারা কোতোয়ালি থানায় অবস্থানে বসেন। সাংসদ বলেন, “তৃণমূল নিজেদের দ্বন্দ্বে হারত। তাই সন্ত্রাস চালিয়ে ভোটে জিততে চাইল।” জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সলিল আচার্য বলেন, “কৃত্রিম জয়ের পথ প্রশস্ত করতে ভোটকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। প্রতিবাদে আগামিকাল মিছিল-ধর্না হবে।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্তর মন্তব্য, “জেলায় ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপ বলেন, “তৃণমূল এ সব করে না। কারা সন্ত্রাস, ইভিএম ভাঙচুর করেছে, জেলাশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারকে চিহ্নিত করতে বলেছি।”