—প্রতীকী চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে, শিলিগুড়ি করিডর বা ‘চিকেন'স নেক’ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের।
সরকারি সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার সমস্ত সেতুর পরিস্থিতি, ভারবহন ক্ষমতা, বিকল্প ব্যবস্থা, আর্থিক দিক, বিভিন্ন রাস্তাঘাট-সহ ভৌগোলিক অবস্থানের তথ্য জোগাড় এবং ‘ম্যাপিং’ করছে দিল্লি। গত এক মাস ধরে একাধিক কেন্দ্রীয় এজেন্সি এ কাজে পুরোদমে নেমে পড়েছে। চিনের পাশাপাশি, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ সীমান্ত সুরক্ষায় জোর দিতেই দিল্লি টানা শিলিগুড়ির উপরে নজর রাখা শুরু করেছে বলে খবর। সূত্রের দাবি, বিশেষ করে নেপালে বন্ধ থেকে শুরু করে সেখানে চিনের প্রভাব দিনের পর দিন বাড়তে থাকায় ‘উদ্বিগ্ন’ নয়াদিল্লি।
এরই মধ্যে আগামী মার্চের প্রথম দিকে উত্তরবঙ্গের দিকে আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরের কথাও রয়েছে। তার আগেই দফায় দফায় অন্তত তিনটি কেন্দ্রীয় সংস্থার রিপোর্ট দিল্লিতে গিয়েছে। তাতে ‘শিলিগুড়ি করিডর’-কে পরিকাঠামোগত ভাবে বাড়তি নজরদারিতে রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। করোনেশন সেতু, বালাসন, মহানন্দার সব সেতু, তিস্তার যাবতীয় সেতু এবং রাস্তার তথ্য রেখে বিকল্প একাধিক রুট, পরিকাঠামোর তথ্য ওই রিপোর্টে রয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘নেপাল থেকে সিকিমের সীমানা, বাংলাদেশ থেকে ভুটানে যাওয়া অবধি শিলিগুড়ির ভৌগোলিক গুরুত্ব অপরিসীম। অনেকের নজর এই অঞ্চলে বেড়েছে। তাই পরিকাঠামো দিক ভারতেও প্রস্তুত থাকতে হবে। সে সব কাজই চলছে।’’
গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, আর্থিক, সামাজিক এবং পরিকাঠামোগত দিক নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে চিন-নেপাল ১২টি বিষয় নিয়ে ‘মউ’ স্বাক্ষর করেছে। প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকুমার দাহাল বা প্রচণ্ড চিন সফরেও গিয়েছিলেন। প্রাক্তন এই মাওবাদী শীর্ষ নেতা তথা বর্তমানে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চিনের প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের বৈঠকও হয়। তার পর থেকে ভারত ‘বন্ধু দেশ’ নেপালের দিকে বাড়তি নজর রেখেছে। সিকিমের নাথু লা, নাকু লায় চিনের আগ্রাসী মনোভাব মাঝেমধ্যেই
সামনে আসে। আর ‘শিলিগুড়ি করিড’র ঘেঁষা নেপালে চিনের সক্রিয়তা আরও বেড়ে যাওয়ায় নিজের পরিকাঠামো মজবুত করতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
এ সবের অঙ্গ হিসাবেই সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনার পক্ষ থেকে জানুয়ারিতে ছ’দিন শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গের আকাশে, জলপথে বিশেষ মহড়া চলেছিল। ওই মহড়ার নাম ছিল ‘ডেভিল স্ট্রাইক’। কোচবিহারের বাংলাদেশ, আলিপুরদুয়ারের ভুটান সীমান্ত থেকে দার্জিলিঙের নেপাল সীমান্ত হয়ে সিকিমের চিন সীমান্ত অবধি উড়েছে রাফাল যুদ্ধবিমান। সেনাবাহিনীর উত্তরবঙ্গ, সিকিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৩৩ কোরের অফিসারেরা সুকনা থেকে নজরদারি চালান। সেনার এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘শিলিগুড়ি, সিকিম, কালিম্পং, ডুয়ার্স ঘিরে একাধিক চার লেন রাস্তা, সিকিমের পাকইয়ং বিমানবন্দর, বাগডোগরা বিমানবন্দরের উন্নতি থেকে করোনেশনের পাশে, দ্বিতীয় তিস্তা সেতু, সিকিমের রেলপথ সবই বিরাট প্রস্তুতির অঙ্গ।’’
এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার নেপাল সীমান্তে যান উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তথা প্রাক্তন আইপিএস অফিসার সিএম রবীন্দ্রন। তিনি পানিট্যাঙ্কি সীমান্তের ‘সশস্ত্র সীমা বল’ (এসএসবি)-এর দফতরেও যান। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রাক্তন এক আইপিএস অফিসারের সীমান্ত এলাকায় যাওয়া বা বাহিনীর লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করার ঘটনাও বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে।