বৈঠকে জেলা প্রশাসনের পদস্থ কোনও কর্তা উপস্থিত হননি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের দল। —নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করলেন জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো। শুক্রবার দিল্লি থেকে মালদহে আসে জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। মালদহ শহরের যুব কল্যাণ আবাসে রাজ্যের প্রথম শিশু অধিকার রক্ষার শিবির করেন। ওই অস্থায়ী শিবিরে শিশুদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং সামাজিক প্রকল্পগুলোর সঠিক ভাবে কার্যকরী তথ্য সংগ্রহ করেন তিনি। জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেন। পাশাপাশি, শিশুদের আধার কার্ড-সহ শিশু সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা হলে তার সমাধানের লক্ষ্যে ওই শিবিরের আয়োজন বলে জানান তিনি। জাতি শংসাপত্র, জন্ম শংসাপত্র, স্কুল-কলেজে ভর্তি হতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, প্রতিবন্ধী শংসাপত্র ইত্যাদি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা আছে কি না, তা নিয়ে ওই শিবিরে খোঁজখবর করা হয়। ওই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীও।
তবে বৈঠকে জেলা প্রশাসনের পদস্থ কোনও কর্তা উপস্থিত হননি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের দল। প্রিয়াঙ্ক অভিযোগের সুরে বলেন, ‘‘রাজ্যের শাসক পুলিশকে দিয়ে আমার উপর গোয়ান্দাগিরি করছেন। শিশুদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সুরক্ষা দলের এই শিবির। সেখানে অসহযোগিতা করছে রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, সুপারিশের এক মাস পরেও গাজলের নির্যাতিতা পরিবার সাহায্য পায়নি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে সমস্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে।’’
শুক্রবার ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম, সাদলাপুর এলাকার বেশ কয়েকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শন করে ওই কেন্দ্রীয় দল। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলোর সাময়িক পরিস্থিতি দেখেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। তাঁরা পুরাতন মালদহের নবাবগঞ্জ এলাকার মৃত ‘ধর্ষিতা’র পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। অভিযোগ করেন পুলিশের রিপোর্ট এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। পুরো বিষয়টির একটি রিপোর্ট তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে জানানো হবে বলে জানান প্রিয়াঙ্ক।
একই সঙ্গে মালদহে নাবালিকার ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগের ঘটনার তদারকি করতে আসেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল। তার নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারপারসর্ন সুদেষ্ণা রায়। তিনি বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের রিপোর্টের পরই এই ভিজিট। অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই।’’ তবে ঘটনার ১৭ দিন পরে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কেন দেখা করতে এলেন তার কোনও উত্তর দেননি সুদেষ্ণা।
জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন এবং রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন— দুই কমিশনের কাজ শিশুদের অধিকার সুরক্ষিত রাখা। কিন্তু একের পর এক ঘটনায়, বার বার সংঘাতে জড়াচ্ছে তারা। উঠে আসছে রাজনীতির অভিযোগ। কলকাতার তিলজলা থেকে মালদহে গাজল এবং উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ, বিভিন্ন কাণ্ডে একই ছবি দেখা যাচ্ছে।