—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতির আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে আলিপুরদুয়ারে পৌঁছল সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তিন জনের একটি দল সোমবার শহরের একাধিক জায়গায় যায়। এই দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার বেশ কিছু তথ্যও সংগ্রহ করে।
গত তিন বছর ধরে মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতির আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করে আসছিল সিআইডি। কলকাতা হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চ গত মাসে এই মামলার তদন্তভার একযোগে সিবিআই ও ইডি-কে দেওয়ার ঠিক আগে, সিআইডির তরফে আলিপুরদুয়ার আদালতে চার্জশিট ও কেস ডায়েরি জমা দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, সে সব নথি সংগ্রহ করতে এ দিন প্রথম আলিপুরদুয়ার জেলা আদালতে যান সিবিআই আধিকারিকেরা। কিন্তু আদালত বন্ধ থাকায়, সেখান থেকে তাঁরা চলে যান জেলা সরকারি আইনজীবী সুহৃদ মজুমদারের বাড়িতে। সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে জেলা আদালতে এ দিন রেস্ট্রিক্টেড হলি-ডে ছিল। তাই সিবিআই-দল আমার বাড়িতে আসে। এই মামলার চার্জশিটের সার্টিফায়েড কপি আগেই সিআইডির তরফে ফরওয়ার্ড করা হয়েছে। এ দিন প্রায় ১,৬৩৫ পাতার কেস ডায়েরি আদালত থেকে বাড়িতে এনে, সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছি। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে খতিয়ে দেখে, তারা সেই নথি গ্রহণ করেছে।” সূত্রের খবর, দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ সিবিআইয়ের দল যায় শহরের কলেজ হল্ট এলাকায়। সেখানে আরটিআই কর্মী অলোক রায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। আলিপুরদুয়ার থানায় ২০২০ সালে অলোকের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই এত দিন সিআইডি ঘটনার তদন্ত করছিল। অলোক বলেন, “এই মামলা সংক্রান্ত যা-যা বিষয় আমার জানা রয়েছে, তা এ দিন সিবিআই আধিকারিকদের সামনে তুলে ধরেছি।”
অলোকের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে সঙ্গে নিয়েই তদন্তকারী আধিকারিকেরা প্রথমে যান বক্সা-ফিডার রোডে অবস্থিত মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতির বন্ধ অফিস চত্বরে। ঋণদান সমবায় সমিতির দফতর যে ভবনে অবস্থিত, তার মালিককেও খানিকক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই দফতরে কারও যাতায়াত রয়েছে কি না, সে সংক্রান্ত খোঁজখবর নেন তাঁরা। তার পরে অলোককে সঙ্গে নিয়েই কল্পনা দাস সরকারের বাড়িতে যান তদন্তকারীরা। হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চে প্রতারিত আমানতকারীদের পক্ষে যাঁরা মামলা করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম কল্পনা। তিনি বলেন, “তদন্তকারীরা আমার থেকে মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়েছিলেন। ওঁরা কারা বুঝতে না পারায়, আমি প্রথমে তা দিতে রাজি হইনি। তার পরে সিবিআইয়ের আধিকারিক হিসেবে নিজেদের পরিচয়পত্র দেখালে, আমি তাঁদের হাতে নথিপত্র তুলে দিই।” যদিও আলিপুরদুয়ারে আসা তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিকদের কেউই এ দিন সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি।
হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের ডিভিশন বেঞ্চে এ দিন এই মামলাটি ওঠে। রাজ্যের অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়জিৎ চৌধুরী বলেন, “সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি সিআইডি-কে যে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, ডিভিশন বেঞ্চ তার উপরে এ দিন স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে থাকবে কি না, সে সংক্রান্ত শুনানি মঙ্গলবার (আজ) সার্কিট বেঞ্চের ডিভিশন বেঞ্চে হবে।” মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী বিক্রমাদিত্য ঘোষ বলেন, “ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ও প্রতারিত আমানতকারীদের পক্ষে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।”