প্রতীকী ছবি
কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক প্যাকেজে আবার হিতে বিপরীত হবে না তো উত্তরবঙ্গের! ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের বড় অংশ অনাদায়ী ঋণ খেলাপিদের তালিকায় ঢুকে যাবেন না তো! সরকারের ঘোষণা তো হল, টাকা শেষ অবধি নিচুতলা পর্যন্ত ছোট শিল্পদ্যোগীদের হাতে পৌঁছবে তো! ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের মধ্যে ৩ লক্ষ কোটি টাকা শুধুমাত্র ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের (এমএসএমই) জন্য রেখেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। বুধবার তাঁর ঘোষণা পরেই এমনই সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শিল্প সংস্থা থেকে শুরু করে বণিকসভাগুলির মধ্যে।
সরকারি ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সরকার ঘোষণা তো করে দেয়। কিন্তু সুফল মেলে না নীচ তলায়। বছর দেড়েক আগে মোদী সরকারই ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের জন্য ২ কোটি টাকা অবধি ক্রেডিট গ্যারান্টি লোনের ঘোষণা করেছিল। কিন্তু মূলত ব্যাঙ্ক বা ঋণদানকারী সংস্থাগুলি ঋণের অঙ্কের দ্বিগুণ, তিনগুণ সিকিউরিটি চেয়ে বসেছিল। এতে ওই ক্ষেত্রে সুফল কিছু মেলেনি বললেই চলে।
বণিকসভা সিআইআই-র সদস্যদের অনেকেই মনে করছেন, সরকারকে দু’টি বিষয় সুনিশ্চিত করতে হবে। সরকারি টাকা নীচ অবধি পৌঁছাতে হবে। আর এর জন্য ব্যাঙ্কগুলি যাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সদর্থক ভূমিকা নেয়, তা সরকারকেই সুনিশ্চিত করতে হবে। কারণ এখানে বরাবর দেখা গিয়েছে, ব্যাঙ্ক ঋণের টাকার থেকে বেশি মনোনিবেশ করে গ্রাহকদের টাকা গচ্ছিত রাখার বিষয়ে। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ওই বিপুল পরিমাণ গচ্ছিত টাকা উত্তর-পূর্বের বদলে দেশের শিল্পের দিক থেকে অতি উন্নত প্রান্তে ঋণ হিসেবে ব্যবহার হয়।
এ ছাড়াও সরকার ৩-৪ বছরের জন্য ঋণ দিলেও তা উন্নত প্রযুক্তি কম থাকায় কোনও কিছু বেশি উৎপাদন করে উত্তরবঙ্গের বাজারজাত করার সুযোগ একেবারেই কম। সিআইআই-র উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান সঞ্জিত সাহা বলেন, ‘‘আমাদের বাজার, উন্নত প্রযুক্তির অভাব। সেটা সরকারের দেখা দরকার। নইলে ব্যাঙ্কের টাকা পেয়েও হয়তো ঋণ খেলাপি উত্তরবঙ্গে বেড়ে যেতে পারে।’’ কয়েক জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কথায়, উন্নত প্রযুক্তি নেই দেখে আজও উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকা থাকা সত্ত্বেও দেশের অন্য প্রান্ত থেকে গরম পোশাক আনতে হয়। তাই সরকারি ঋণ নিয়ে ব্যবসা বাড়িয়ে বাজার না পেয়ে লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিত দাস বলেন, ‘‘সরকারি সুবিধা গ্রাউন্ড জিরো স্তরে আনতে পারলে, ক্ষুদ্র, মাঝারি ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।’’
উত্তরবঙ্গে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের সংখ্যা আনুমানিক ১০ হাজার। প্লাস্টিকজাত দ্রব্য, চাল, আটা, ময়দা-সহ বিভিন্ন খাবারের কারাখানা, বটলিফ কারখানা, পাইপ ইত্যাদি বহু ধরনের কারখানা রয়েছে। সংগঠনগুলির হিসেবে প্রতিটি সচল থাকা সংস্থা করোনা, লকডাউনের জেরে মাসে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতির মুখে পড়েছে। মোট ক্ষতির পরিমাণ ১৫০০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে।
নর্থবেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সচিব সুরজিত পাল জানান, ‘‘ব্যাঙ্কে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের যে সিকিউরিটি গচ্ছিত, তা ঋণের থেকে বেশি। এই বেশি পরিমাণের কিছুটা ফেরালে এবং কর ক্ষেত্রের কিছু সুবিধা ১ বছর বাড়িয়ে দিলে সংস্থাগুলি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’’