সোমবার বিকেলে গেট খুলে বাংলাদেশে আটকে পড়া ছ’টি ভারতীয় লরি এ পারে আনা হয় এবং চারটে খালি লরি এপারে ফেরত পাঠানো হয়। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়তেই বদলে গেল সীমান্তের চেহারা। দু’পাশেই বাড়ল কড়াকড়ি। বন্ধ হয়ে গেল বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যও। সোমবার সকাল থেকেই বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। রবিবার কোচবিহারের স্থলবন্দর চ্যাংরাবান্ধা হয়ে বেশ কিছু ট্রাক বাংলাদেশে গিয়েছিল। দ্রুত সেগুলি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাও করা হয়। আবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা ট্রাকগুলিকেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যাবসায়ীরা। চ্যাংরাবান্ধা এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোজ কানু বলেন, ‘‘সাধারণত সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত আমদানি-রফতানি চলে। কিন্তু রবিবার তা এক ঘণ্টা কম হয়েছে। কারণ ও’দিন সন্ধ্যা থেকেই বাংলাদেশে কার্ফু জারি করা হয়। আর আজ (সোমবার) তো সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ও পাশের কোনও ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে তিন দিনের ছুটি ঘোষণার কথাও শুনেছি। এই পরিস্থিতিতে কবে সীমান্ত স্বাভাবিক হবে তা বুঝতে পারছি না।’’
চ্যাংরাবান্ধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থলবন্দর। ওই পথে ভারত-বাংলাদেশের পাশাপাশি, ভুটান-বাংলাদেশ বাণিজ্যও হয়। সেখানে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট রয়েছে। প্রচুর মানুষও যাতায়াত করেন। রবিবার সকালে নির্দিষ্ট সময় মতোই চ্যাংরাবান্ধায় আমদানি-রফতানি শুরু হয়। সন্ধ্যের আগে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, ওই পথে মূলত পাথর ও কাঁচা লঙ্কার মতো কিছু আনাজ বাংলাদেশে যায়। আবার বাংলাদেশ থেকে কাপড় বোঝাই ট্রাক আসে ভারতে। সীমান্তের বহু মানুষ ওই কারবারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। অনেক শ্রমিক ট্রাক থেকে জিনিসপত্র নামানো-ওঠানোর কাজ করেন। এ ছাড়া প্রচুর ছোট দোকান রয়েছে সেখানে। বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতির কারণে প্রত্যেকেই কার্যত হাত গুটিয়ে বসে পড়েছেন। দিন কয়েক আগেও একই পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে পাঁচ দিন ব্যবসা বন্ধ ছিল। তাতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এই অবস্থার মধ্যেও চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে ঝুঁকি নিয়েই কিছু মানুষ এসেছেন এ পারে।
ব্যবসায়ীরা জানান, চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে প্রতি দিন প্রায় আড়াইশো থেকে তিনশো ট্রাক যাতায়াত করে। প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার ব্যবসা হয়। পাশাপাশি ওই সীমান্ত দিয়ে প্রতি দিন পাঁচশো থেকে ছ’শো মানুষ যাতায়াত করে। সেখানে এ দিন হাতে গোনা লোক এ পারে এসেছেন। দুপুরের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবরের পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। মানুষের যাতায়াতও বন্ধ হয়ে যায়।
এ দিন বাংলাদেশের রংপুর থেকে সুমন রায় এবং লালমনিরহাট থেকে তারেব হোসেন চিকিৎসার জন্য চ্যাংরাবান্ধা হয়ে ভারতে পৌঁছন। তাঁরা বলেন, ‘‘রাস্তায় কোনও গাড়ি নেই। গন্ডগোলের খবর পাচ্ছিলাম বিভিন্ন জায়গা থেকে। ঝুঁকি নিয়েই আসতে হয়েছে। চিকিৎসা তো করাতেই হবে।"