পেট্রল পাম্প ধর্মঘটে পেট্রোলের কালোবাজারি আলিপুরদুয়ার শহরে। ছবি: নারায়ন দে।
পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে রাজ্যে এসেছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই সময়ে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকার জ্বালানি তেল ব্যবহার হয়েছিল। যে টাকা এখনও বকেয়া থাকার অভিযোগ তুলে পেট্রল পাম্প ধর্মঘট করলেন কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার থেকে শুরু করে গোটা উত্তরবঙ্গের পাম্প মালিকেরা। সেই সুযোগে কোচবিহারে চলল তেলের কালোবাজারি। এক লিটার তেল বিক্রি হল ১৫০ টাকায়। কোথাও আরও বেশি টাকা দিয়ে তেল কিনলেন গ্রাহকেরা।
সূত্রের খবর, পেট্রল পাম্পগুলি তাদের বকেয়া টাকা চেয়েছে রাজ্যের কাছ থেকে। এ দিকে রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে। ফলে, বকেয়া টাকা কে মেটাবে তা নিয়ে চলছে টানাপড়েন। ‘উত্তরবঙ্গ পেট্রল মালিক সমিতি’র কোচবিহার জ়োনের দায়িত্বে রয়েছেন দীপঙ্কর বণিক। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে শুধু কোচবিহরেই এক কোটি ৯০ লক্ষ টাকার তেল দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। সে বকেয়া কেউ মেটাচ্ছে না। এ ছাড়া, একাধিক ব্লক অফিসের লক্ষ-লক্ষ টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। এমন হলে পেট্রল পাম্প চালানো কঠিন। তাই বাধ্য হয়ে আন্দোলন করতে হচ্ছে।’’
কোচবিহার স্টেশন মোড়ে একটি পেট্রল পাম্প রয়েছে। সে পাম্প এ দিন বন্ধ ছিল। পেট্রল পাম্পের পাশেই রাস্তার ধারে ছোট-ছোট পাত্রে জ্বালানি তেল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কয়েক জন যুবক। লিটার প্ৰতি কেউ তিরিশ টাকা কেউ চল্লিশ টাকা বেশি নিয়ে পেট্রল বিক্রি করছিলেন। ওঁদের এক জন বলেন, ‘‘অনেক ঝুঁকি নিয়ে বিক্রি করছি। কিছু তো লাভ করতেই হবে। এ ছাড়া, অনেকে তো বিপদে পড়ে আসেন, তাঁদেরও সুবিধা হচ্ছে।’’ খোলা জায়গায় প্রায় সর্বত্র পেট্রল বিক্রির অভিযোগ রয়েছেই। এ দিন তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দিনহাটা-মাথাভাঙা প্রধান সড়কের ধারে বোতলে পেট্রল ভরে তা বিক্রি করা হয়।
আলিপুরদুয়ারেও ধর্মঘটের জেরে বন্ধ পেট্রল পাম্প বন্ধ ছিল গোটা দিন। সেখানেও একই ছবি। আলিপুরদুয়ার শহর-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় পাম্পের সামনেই পেট্রলের কালোবাজারি চলে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, কোথাও লিটার প্রতি পেট্রল কিনতে গ্রাহকদের গুণতে হল বাড়তি কুড়ি টাকা, তো কোথাও আবার তিরিশ থেকে চল্লিশ টাকা।
এমনিতেই রাতে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আলিপুরদুয়ার জেলার বেশ কিছু পাম্পের কাছে প্রায় প্রতিদিনই পেট্রলের কালোবাজারি চলে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, কোনও রাখঢাক না করে এ দিন সকাল থেকেই খোলা বাজারে পেট্রল বিক্রি শুরু হয়। আরও অভিযোগ, সেই কালোবাজারির বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায়নি প্রশাসন বা পুলিশকে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক যদিও জানিয়েছেন, কালোবাজারির কোনও অভিযোগই তাদের কাছে কেউ করেননি। জেলা পুলিশের এক কর্তাও জানান, তাঁদের কাছে তেমন অভিযোগ যায়নি। তবে সাধারণ মানুষের স্বার্থে কর্তৃপক্ষকে রাজি করিয়ে জেলায় দুটি পেট্রল পাম্প সকালের দিকে খুলে রাখা হয়।