প্রত্যাবর্তন: সাড়ে তিন বছর পর পাহাড়ে ফিরে প্রথম জনসভা বিমল গুরুংয়ের। রবিবার দার্জিলিংয়ের চকবাজারে। ছবি: স্বরূপ সরকার।
কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি ফিরে দুই সপ্তাহ থাকার পর রবিবার ভোর ৬টা নাগাদ রওনা দেন পাহাড়ের পথে। প্রায় আট ঘণ্টা ধরে নতুন করে জনসংযোগ ঝালিয়ে নিয়ে বিকেল ৩টে নাগাদ সাড়ে তিন বছর পর দার্জিলিং ফিরলেন মোর্চা নেতা বিমল গুরুং।
রাস্তায় নেমে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলা, মিছিলে হাঁটা, নতুন করে পার্টি অফিস খোলা কিছুই বাদ রাখলেন না। আবার চকবাজার লাগোয়া মোটর স্ট্যান্ডে সভার মঞ্চে উঠেই জানিয়ে দিলেন, তিনিই ‘পাহাড়ের অভিভাবক’। ১০৯৯ দিন পর ঘরে ফিরলেন। কয়েক বছর পাহাড় ‘কান্না’র মধ্যে ছিল। এ বার পাহাড়ের রানি দার্জিলিং হাসবে।
বিজেপিকে একহাত নেওয়া, বিনয় তামাং-অনীত থাপাকে পাহাড় ছাড়ার হুমকির মধ্যেই নিজের দলীয় সংগঠন মজবুত করতে তিনি যে কোনও খামতি রাখবেন না তা স্পষ্ট করে দিলেন।
গুরুং বললেন, ‘‘এই সাড়ে তিন বছর আমি কষ্ট করছি। পাহাড়বাসীর প্রার্থনায় সুস্থ শরীরে ফিরলাম। কিন্তু এর মাঝে অনেকেই অন্যদিকে, কেউ জিএনএলএফ বা সিপিআরএমে দিকে চলে গিয়েছিল। সবাই এস, আমার সঙ্গে কথা বলো। কষ্ট, দুঃখ ও আনন্দ ভাগ করো। আমরা পাহাড়কে শক্তিশালী বানাব।’’ পাহাড়ের নেতার জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে ক্ষমতা থাকার দরুণ বিনয়-অনীতেরাও শক্তিশালী সংগঠন গড়েছেন। বাকি দলগুলিও লোকজন নিয়ে কাজ করছে। ২০১৭ সাল অবধি এই লোকবলের অধিকাংশই গুরুং শিবিরের ছিল। তাই আপাতত নিজের সংগঠনকে জোরদার করে পাহাড়ের ‘ঘর ওয়াপসি’র প্রথম দিনটাকেও কাজে লাগালেন গুরুং। সুকনা থেকে রোহিনী গেট, কার্শিয়াং থেকে সোনাদা সব জায়াগায় নেমে পুরনো মুখগুলোকে পাশে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেলেন। সভায় ভিড় হলেও রাস্তায় কোথাও কোথাও আগের মত উদ্দীপনা না দেখায় গুরুং সবাইকে পাশে আসার আবার ডাক দিলেন।
২০১৭, মে
• পাহাড়ে বাংলা ভাষা পড়ানোর ঘোষণা রাজ্যের।
২০১৭, জুন
• আলাদা করে নতুন রাজ্যের আন্দোলন।
• দার্জিলিঙে মন্ত্রিসভার বৈঠক, অগ্নিগর্ভ পাহাড়।
• অনির্দিষ্টকালের পাহাড় বন্ধ।
২০১৭, সেপ্টেম্বর
• রোশন গিরিকে নিয়ে পাহাড় ছাড়েন বিমল।
• বিমলের খোঁজে সিকিমের নামচিতে রাজ্য পুলিশ। গুলির লড়াই। দুই রাজ্যের পুলিশের ধস্তাধস্তি।
২০১৭, অক্টোবর
• জঙ্গলে গুরুংয়ের খোঁজে গুলির লড়াই, পুলিশ অফিসার অমিতাভ মালিকের মৃত্যু।
• রাজ্যের সঙ্গে সমঝোতা, পাহাড়ের নতুন নেতা বিনয় তামাং, অনীত থাপা।
২০১৮, মার্চ
• বিমলের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচের আবেদন খারিজ সুপ্রিম কোর্টে।
• সিকিম হয়ে নেপালের হোটেলে বিমলের প্রচার।
২০১৯, মার্চ
• লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির সমর্থনে বিমলের অডিয়ো, ভিডিয়ো ভাইরাল পাহাড়ে।
২০২০, অগস্ট
• দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ বিমলের, শিলিগুড়িতে জানানন কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
২০২০, অগস্ট
• দিল্লির পর বিহার, ঝাড়খণ্ডে আশ্রয়।
২০২০, অক্টোবর
• এনডিএ ছাড়ার ঘোষণা। বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতানোর ঘোষণা।
২০২০, ডিসেম্বর
• কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি, তরাই ও ডুয়ার্সে পরপর জনসভা।
• টানা কর্মিসভা ও নতুন দলীয় দফতর তৈরি।
• সাড়ে তিন বছর পর দার্জিলিঙে জনসভা বিমলের।
বিজেপিকে কেন তিনি ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরলেন তা যেমন সভায় বোঝালেন। তেমনিই, মমতার সঙ্গে তাঁর দেনা পাওয়ার শর্ত কথা বলেও জানিয়ে দিলেন। ২০২১ সালে তৃণমূলের পাশে থাকলেও ২০২৪ সালে আলাদা রাজ্যের সমর্থনকারীদের সঙ্গে তিনি যাবেন তা আবার পরিষ্কার করেছেন। তবে গত তিন বছরের বিনয়-অনীত পাহাড়ে চুরি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন। জিটিএ-র ৭০ শতাংশ টাকা দুর্নীতি, চাকরির স্বজনপোষণ, দুই নেতার সম্পত্তি বৃদ্ধির অভিযোগ তুলেছেন। গুরুং বলেছেন, ‘‘একজন নিজেকের পাহাড়ের মন্ত্রী (বিনয় তামাং) ভাবে। আর একজন আমার তৈরি কাজের খালি ফিতে (অনীত থাপা) কাটে।’’ আন্দোলনের পর বাড়ি ক্রোক হওয়া, আগুনে পোড়ায় আপাতত গুরুং পাতেলবাস লাগোয়া পাট্টাবং চা বাগানের বাংলোয় থাকবেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ১০-১২ দিন পাহাড়ে থেকে ফের তরাই-ডুয়ার্স যাবেন।
বিনয় তামাং বলেছেন, ‘‘জিটিএ অডিট শুরু হতেই উনি ২০১৭ সালে আন্দোলন করে পাহাড়ে আগুন জ্বালান। মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেন, আর সুবাস ঘিসিং-র স্ত্রীর দেহ পাহাড়ে উঠতে পর্যন্ত দেননি। রাজ্য সরকার দেখুক, কাকে ওঁরা এনেছেন। তবে আমরা পাহাড়ে আছি, থাকব।’’