— নিজস্ব চিত্র।
ঠিক কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ? এ প্রশ্নের সঠিক জবাব এখনও অধরা। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব প্রাথমিক ভাবে যান্ত্রিক ত্রুটির দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ‘কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি’ (সিআরএস) রিপোর্ট দেবেন, তা-ও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। একই কথার প্রতিধ্বনি রেলের অন্য কর্তাদের গলাতেও।
এই আবহে উঠে আসছে একটি নির্দিষ্ট কারণের কথা। রেল চলাচল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহলের একটি অংশ মনে করছে, ১৫৬৩৩ বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনে কোনও সমস্যা হয়েছিল। তার জেরেই দুর্ঘটনা। ওই অংশের মতে, নিউ দোমহনি স্টেশন পেরোতেই ইঞ্জিনে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে। তার জেরেই কিছু দূর গিয়ে বেলাইন হয়ে যায় ট্রেনের অন্তত ১০টি কামরা।
এই ট্রেনে যে ইঞ্জিন ছিল, ২০১৫ সালে সেই ধরনের ‘ওয়াপ-ফোর’ ইঞ্জিন তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। কী করে এমন ঘটল, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, বিকানের এক্সপ্রেস টানছিল তেমনই ‘ওয়াপ-ফোর’ বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন (নম্বর— ২২,৩৭৫)। এই ধরনের ইঞ্জিনের তলার দিকে লাগানো থাকে চারটি করে ট্র্যাকশন মোটর। এই ট্র্যাকশন মোটর থেকে শক্তি পৌঁছয় ইঞ্জিনে। সেই শক্তিতে ভর করে কামরা নিয়ে ছোটে ট্রেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইঞ্জিনের তলায় লাগানো চারটি ট্র্যাকশন মোটরের একটি সম্ভবত বিকল হয়ে খুলে পড়েছিল। রেলের ইঞ্জিন ও রেললাইনের মাঝে তা আটকে যায়।
সেই সময় বিকানের এক্সপ্রেস ছুটছে অন্তত ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে। মনে করা হচ্ছে, প্রবল গতিতে থাকায় খুলে যাওয়া ট্র্যাকশন মোটর ইঞ্জিন ও রেললাইনের ফিশপ্লেটের মাঝে আটকে ঘষতে ঘষতে চলে কিছুটা। এরই মধ্যে গতির জেরে ইঞ্জিনের শেষ দিকের চাকার (হুইল অ্যাসেম্বলি বা একসঙ্গে ছ’টি চাকা) সঙ্গে ধাক্কা লেগে চাকাসুদ্ধ ট্র্যাকশন মোটর ছিটকে বেরিয়ে আসতে চায় ইঞ্জিনের তলা থেকে। বিপদ বুঝে চালক আপৎকালীন ব্রেক কষলেও লাভ হয়নি। গতির অভিঘাতে ইঞ্জিনের পিছনের কামরাগুলো একে একে লাইনচ্যুত হতে শুরু করে।
রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা, তা সবিস্তারিত তদন্ত করে দেখবেন সিআরএস। শুক্রবার সিআরএস ঘটনাস্থল ঘুরে গিয়েছেন। তবে সাংবাদিকদের কাছে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
শুক্রবার সকালেই ঘটনাস্থল ঘুরে গিয়েছেন রেলমন্ত্রী স্বয়ং। তিনি সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ পৌঁছন নিউ দোমহনি স্টেশনে। সেখান থেকে মোটর ট্রলিতে তিনি পৌঁছন দুর্ঘটনাস্থলে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিকানের এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনে উঠে এবং তলার দিক নিজে পরীক্ষা করে দেখেন নিজেই। কথা বলেন রেলের কর্মরত ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গেও। তার পর রেলমন্ত্রী হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন।
দুর্ঘটনার নির্দিষ্ট কারণ এখনও জানা না গেলেও প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, রেললাইনে কোনও ত্রুটি ছিল না। ইঞ্জিনের গোলমালের কারণেই দুর্ঘটনায় পড়ে গুয়াহাটিগামী বিকানের এক্সপ্রেস। তাতে মৃত্যু হয় ৯ জনের। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আরও অনেকে।