ভাঙচুর করা হয়েছে ঘরবাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যকে না জানিয়ে বিহারের পুলিশ পরিচয় দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মারধর এবং বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল। এই ঘটনা বিহার সীমানায় অবস্থিত মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের সাদলিচক গ্রাম পঞ্চায়েতের সহরাবহরা এলাকার। ওই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে চাপানউতর শুরু হয়েছে। কারণ, রাস্তার ধারের জমি ‘দখলমুক্ত’ করতে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা বিহারের পুলিশকে ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ।স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুক্রবার সন্ধ্যায় সহরাবহরা এলাকায় ঢোকে এক দল সশস্ত্র লোক। তারা নিজেদের বিহারের পুলিশ হিসাবে পরিচয় দেয়। ওই এলাকায় রাস্তার ধারে বসবাস করা কুড়িটি পরিবারের বাড়িঘর তারা ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। ওই এলাকার বাসিন্দাদের তারা মারধর করে বলেও অভিযোগ। এ নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে স্থানীয় কুমেদপুর ফাঁড়ি এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানায়।
সাদলিচকে রাজ্য সড়কের ধারে প্রায় ২০টি পরিবার ৭০ বছর ধরে বসবাস করছে। তাদের নিজস্ব কোনও জমি নেই। ওই বাড়িগুলির পিছনে জমি রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা গণেশ প্রামাণিকের। গণেশ ওই এলাকার বাসিন্দাদের মাঝেমাঝেই হুমকি দিত বলেও অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গণেশের বিহারে যাওয়া আসা ছিল। সেই সূত্রেই সেখানকার কয়েক জন পুলিশকর্মীর সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। আরও অভিযোগ, গণেশ সেই পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে শুক্রবার তিনি ওই পরিবারগুলির উপর আক্রমণ চালান। জেসিবি দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় কুঁড়েঘরগুলি।
হেনস্থার শিকার হওয়া আকালু দাস নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এর মধ্যেই এক দল সশস্ত্র লোক আমাদের উপর হামলা চালায়। ওরা বিহারের বিভিন্ন থানায় কাজ করে। আমাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। ব্যাপক মারধর করে। রেহাই পায়নি মহিলা শিশুরাও। আমরা দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে হরিশ্চন্দ্রপুরের এই এলাকায় বসবাস করছি। তৃণমূল নেতা গণেশ প্রামাণিক আমাদের সরানোর জন্য চক্রান্ত করে বিহারের পুলিশের সাহায্যে এই আক্রমণ চালিয়েছে।’’
গণেশকে সাদলিচক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ইন্দ্রজিৎ সরকার মদত দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। যদিও সেই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন প্রধান ইন্দ্রজিৎ। তিনি বলেন, ‘‘ওটা বিহার পুলিশের ব্যাপার। আমার কিছু করার নেই।’’ যদিও এ নিয়ে গণেশ কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।
তবে ঘটনার সমালোচনা করেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। তিনি বলেন, তৃণমূল নেতাদের মদতেই এই আক্রমণ। রাস্তার পিছনের জমি তৃণমূল নেতারা কিনে নিয়েছেন। তাই ওঁরা জমির সামনে থেকে এই কুঁড়েঘরগুলি সরিয়ে দিতে চাইছেন। তাই বিহারের পুলিশের কিছু কর্মীকে ভাড়া করে এই কাজ চালিয়েছেন এলাকার তৃণমূল নেতারা।’’
মালদহ জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্বু রহমান বলেন, ‘‘ওই পরিবারগুলি দীর্ঘ দিন ধরে ওই এলাকায় বাস করছেন। বিহারের পুলিশ এই ভাবে এসে আক্রমণ চালাবে এটা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। ওরা বাংলার জমিতে বসবাস করছে না বিহারের জমিতে বসবাস করছে সেটা দেখার জন্য আইন রয়েছে। আমরা এটা বরদাস্ত করব না। তবে এর পিছনে তৃণমূলের কোনও হাত নেই।’’
হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, ‘‘এই ঘটনার বিষয়ে আমাদের কিছু জানা ছিল না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’